তিতুমীর কলেজ (Titumir College)-এর দর্শন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানু, যিনি ২০২৩ সালের আলোচিত জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার বাদী ছিলেন, এবার নিয়োগ পেলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ (Brahmanbaria Govt. Women’s College)-এর অধ্যক্ষ হিসেবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ২ জুলাই এ নিয়োগের আদেশ জারি করে।
এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সরাসরি ঘোষণা আসে—মালেকা বানুকে কলেজে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই বনানী থানায় একটি মামলা করেন মালেকা আক্তার বানু, যেখানে তিনি বলেন, সরকারি ছুটির দিনে ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় অজ্ঞাতনামা ৭০০ জন বিএনপি-জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্ট দুষ্কৃতকারী কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এই মামলাটি ছাত্রদের কাছে বরাবরই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী খন্দকার সাইমা সুলতানা বলেন, “তিনি ৭০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এমন একজনকে আমাদের অধ্যক্ষ হিসেবে মেনে নেওয়া অসম্ভব ও অবমাননাকর।”
আরেক শিক্ষার্থী সাদেকুর নাহার কবিতা জানান, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে তার নিয়োগে আমরা ব্যথিত এবং আমরা তাকে প্রত্যাখ্যান করছি।”
এ ছাড়া জেলা ছাত্রদল (District Chhatra Dal)-এর সদস্য সচিব সমীর চক্রবর্তী বলেন, “ফ্যাসিবাদের দোসর অধ্যাপক মালেকাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। তার নিয়োগ আদেশ বাতিল না হলে আমরা ছাত্রদের সঙ্গে রাজপথে নামব।”
শিক্ষার্থী প্রতিনিধি বায়েজিদুর রহমান সিয়াম ও মেহেরুন্নেছা মুনিয়া একই ভাষায় বলেন, “আমরা তার নিয়োগ বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেব। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একদিনের জন্যও অফিস করতে পারবেন না।”
মালেকা বানুর ব্যাখ্যা
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অধ্যাপক মালেকা আখতার বানু বলেন, “সেসময় অধ্যক্ষের অনুরোধে এবং সরকারের নির্দেশনায় আমি মামলার বাদী হই, কারণ অন্য কেউ রাজি হচ্ছিল না। তবে আমার জানা ছিল না, মামলার আসামি হিসেবে শিক্ষার্থীদের নাম আসবে। আমি একজন মা এবং শিক্ষক হিসেবে কখনোই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যেতে পারি না।”
তিনি আরও দাবি করেন, “আমি মামলাটি ইতিমধ্যেই প্রত্যাহার করে নিয়েছি। কেউ যেন আমাকে ভুল না বোঝেন।”
তবে শিক্ষার্থীরা বলছে, মামলা প্রত্যাহার করলেও সেই স্মৃতি ও দায় মুছে যায় না। বরং তার নিয়োগ ন্যায়বিচার ও শিক্ষাঙ্গনের নৈতিকতার প্রশ্নে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।