“জুলাই-আগস্টের শহীদদের গল্প বিকৃতি বন্ধ করুন: আশরাফ কায়সারের তীব্র সতর্কবার্তা”

রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন করে আলোড়ন তুলেছেন বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার (Ashraf Kaiser)। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শো অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “জুলাই-আগস্টের নায়করা শহীদ, তারা মারা গেছেন। শুনতে খারাপ লাগলেও সত্যি এই যে, যারা বেঁচে আছেন তারা সত্য-মিথ্যার গল্প গেঁথে নিজেদের পদ-পদবি আর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চাইছেন।”

তার বক্তব্যে উঠে এসেছে এক কঠিন কিন্তু বাস্তব সত্য—বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণ-আন্দোলনের যে শহীদরা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের রক্তমাখা অধ্যায় এখন বিকৃত গল্পের উপকরণ হয়ে উঠছে। “এটা যত দ্রুত বন্ধ হবে, নিহতদের প্রতি তত দ্রুত যথার্থ সম্মান জানানো যাবে,” বলেন কায়সার।

গণ-অভ্যুত্থান আর তার নায়ক-নায়িকারা

তিনি আরও বলেন, “গণ-অভ্যুত্থান বা বিপ্লবের আয়রনি হলো—এর নায়করা মারা যান, আর যারা বেঁচে থাকেন, তারা সেই গল্প বলে নিজেদের জন্য সুবিধা আদায় করেন। কেউ মন্ত্রী হন, কেউ রাজনীতিক।”

আন্দোলনের প্রকৃত স্বরূপ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কায়সার। তার ভাষায়, “১৫৮ জন কিংবা ৫ হাজার জন দিয়ে কি সত্যিই গণ-অভ্যুত্থান সম্ভব? না, গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল যখন ৫০ লাখ মানুষ একসাথে রাস্তায় নেমে এসেছিল। সেই সাধারণ মানুষ জানত না কারা শিবির, কারা ছাত্রশক্তি, কে আসিফ, কে মাহফুজ। যদি কাউকে মাস্টারমাইন্ড বলতে হয়, তবে তারা হচ্ছেন শহীদরাই—যারা জীবন দিয়ে দিয়েছেন।”

রাজনীতির কৌশলে বিভাজন আর বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ

আশরাফ কায়সার গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “এই যে দেশের ৫০-৬০ লাখ মানুষ আন্দোলনে নেমেছিল, তারা আজ নিজেদের প্রতারিত মনে করে। তারা ভাবে— আমি কি এমন একটি আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম যার পেছনে ছিল স্বাধীনতাবিরোধী ছাত্রসংগঠন? যদি মানুষ জানত আন্দোলনের ১৫৮ জন সমন্বয়কের মধ্যে ১০৮ জন শিবিরের লোক, তবে কি তারা রাস্তায় নামত? নিশ্চয়ই না।”

বর্তমান সময়ে আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীরা একে অপরের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগ করছে—এ অভিযোগগুলো শুধু রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে নয়, বরং জনগণের মনে যে আন্দোলনটা ছিল নিখাদ দেশপ্রেমের, তার ভিত্তিও কাঁপিয়ে দিচ্ছে।

তার মতে, “অনেকে এখন এমন সব গল্প বলছে যা ঘটেনি—ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বানানো গল্প দিয়ে ইতিহাস রচনা করছে। এতে করে শুধু আন্দোলনের বিশ্বাসযোগ্যতাই নষ্ট হচ্ছে না, বরং শহীদদের সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করা হচ্ছে।”

তিনি সব পক্ষকে দ্রুত এই দোষারোপ আর মিথ্যাচার বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “সত্যকে স্বীকার করুন, ইতিহাসকে বিকৃতি করবেন না। আন্দোলনের মর্যাদা নষ্ট করে কেউ দীর্ঘমেয়াদী রাজনীতি করতে পারে না।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *