২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (ICC) বিচার চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (Amnesty International)। সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া শাখার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গতকাল বুধবার (৯ জুলাই) এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোম সংবিধির ১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে ওই সময়কালের সহিংসতার ঘটনাগুলো বিচারযোগ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো উচিত। অ্যামনেস্টি বলছে, এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
এই দাবির পেছনে ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসি (BBC)-র এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে একটি ফাঁস হওয়া অডিও বিশ্লেষণ করে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভ দমন অভিযানে প্রাণঘাতী গুলির নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অডিও প্রমাণকে গুরুত্ব দিয়ে অ্যামনেস্টি বলছে, বিক্ষোভে সহিংসতার নির্দেশদাতা ও বাস্তবায়নকারীদের যথাযথভাবে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে, ওই সময়ের বিক্ষোভে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। অধিকাংশ নিহত হয়েছেন বাংলাদেশি নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত সামরিক রাইফেল ও শটগানের ছররা গুলিতে। সেইসঙ্গে কয়েক হাজার মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন, যাদের অনেকের জীবনে তা স্থায়ীভাবে প্রভাব ফেলেছে।
এ প্রসঙ্গে অ্যামনেস্টি জোর দিয়ে বলেছে, “বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই এই সহিংসতার স্বাধীন তদন্ত করতে হবে এবং যেসব ব্যক্তি ও সংস্থা এতে অংশ নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং মৃত্যুদণ্ডবিহীন বিচারপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অ্যামনেস্টির আহ্বান, জাতিসংঘের সুপারিশ অনুযায়ী এসব ঘটনা আইসিসিতে পাঠানো ও আন্তর্জাতিক তদন্তের আওতায় আনার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। কারণ এই বিচার না হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বার্তা আরও প্রশস্ত হবে।
এই আহ্বান শুধু মানবাধিকার রক্ষার দাবি নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থার পরীক্ষাও।