জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া সরকারের হাতে তুলে দিচ্ছে বিএনপি

‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ নিয়ে সরকার ফের সক্রিয় হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ দলিলটি দ্রুত চূড়ান্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর অংশ হিসেবে বৃহত্তম বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির (BNP) কাছেও সম্প্রতি নতুন করে খসড়া পাঠানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার এবং বুধবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই খসড়া পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে কিছু সংযোজন ও সংশোধনের মাধ্যমে চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। দলটি আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই সংশোধিত কপি সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে বলে জানা গেছে। এ দায়িত্বে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ (Wahiduddin Mahmud)।

বিএনপির এই বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman) লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে বিএনপি নেতারা মত দেন, ছাত্রদের মতো তারাও চান জুলাই ঘোষণাপত্র দ্রুত ঘোষণা হোক এবং বিষয়টি নিয়ে তারা আন্তরিকভাবে অংশ নিচ্ছেন।

২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনজাতীয় নাগরিক কমিটি (National Citizens’ Committee)। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। যদিও প্রথম দিকে সরকার নিজেকে এই উদ্যোগ থেকে দূরে রাখার কথা জানায়, পরে ৩০ ডিসেম্বর রাতে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব জানান, সরকার জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। পরদিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচির মাধ্যমে এই ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

এই সময়ের মধ্যে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে খসড়া পাঠায়, এবং বিএনপিসহ বেশ কিছু দল তাতে মতামত দেয়। এরপর ১৬ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তবে সেই গতি থেমে যায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যে।

পরবর্তীতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizens’ Party) সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে সরকার যদি ঘোষণাপত্র প্রকাশ না করে, তবে তারাই তা ঘোষণা করবে।

গণতন্ত্রের উত্তরণ এবং ইতিহাসের প্রসঙ্গ

ঘোষণাপত্রের খসড়ায় শুধু সাম্প্রতিক আন্দোলন নয়, বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতার দীর্ঘ ইতিহাসও তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উপনিবেশিক শাসনের অবসান, এরপর ২৩ বছরের শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা রয়েছে। এ ছাড়াও ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সূত্র ধরে গণঅভ্যুত্থান, এবং তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) পদত্যাগ ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও খসড়ায় স্থান পেয়েছে।

একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী শাসন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুটের বিচার দাবি করা হয়েছে। জানা গেছে, এসবের পাশাপাশি নতুন আরও কিছু ইস্যু যুক্ত হয়েছে সংশোধিত খসড়ায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *