সোহাগ হত্যাকাণ্ডে চাঁদাবাজির প্রমাণ নেই, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বই মূল কারণ: ডিএমপি

রাজধানীর মিটফোর্ডে দিনেদুপুরে সংঘটিত সোহাগ হত্যাকাণ্ড ঘিরে যখন দেশজুড়ে ক্ষোভ আর নানান গুঞ্জন, তখন প্রাথমিক তদন্ত শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) (Dhaka Metropolitan Police) জানাল, এটি চাঁদাবাজির ঘটনা নয়, বরং একাধিকজনের মধ্যে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেই জন্ম নিয়েছে এই নৃশংসতা।

শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জসীম উদ্দিন (Jasim Uddin) বলেন, “নিহত সোহাগ ও তার ঘাতকরা ভাঙারি ব্যবসার অংশীদার ছিল। একটি দোকান নিয়ে কারা ব্যবসা করবে, এই নিয়েই চলছিল উত্তেজনা। চাঁদাবাজির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”

তিনি জানান, ৯ জুলাই বিকাল ৫টা ৪০ মিনিট থেকে ৬টার মধ্যে কোতোয়ালি থানাধীন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে এবং আশপাশের এলাকায় এক বর্বর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

ডিসি জসীম বলেন, “অনেক লোক একত্রিত হয়ে মো. সোহাগকে পাথরসহ নানা অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করে হত্যা করে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুজনকে সেখানেই গ্রেপ্তার করে।”

পরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালেই পাঠানো হয়। এ ঘটনায় মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন—মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১), আলমগীর (২৮), মনির ওরফে ছোট মনির (২৫), টিটন গাজী (৩২) এবং তারেক রহমান রবিন (২২)।

সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে তাদের শনাক্ত করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সোহাগ এবং অভিযুক্তরা এক সময় একসঙ্গে ভাঙারির ব্যবসা করতেন। কিন্তু দোকান ব্যবস্থাপনা ও মুনাফা বণ্টন নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। সেই বিরোধই রূপ নেয় সংঘাত ও পরবর্তীতে ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডে।

ডিসি জসীম জানান, “ঘটনায় কারও রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। মূল রহস্য উন্মোচন এবং বাকি জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “সোহাগ কেন খুন হলেন, তার প্রকৃত পটভূমি উদঘাটনের জন্য একটি চৌকস তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। পুলিশ এই ঘটনায় অত্যন্ত তৎপর এবং অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”

সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমে সোহাগ হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চললেও ডিএমপির এই বক্তব্য স্পষ্ট করেছে, এটি ছিল একদল ব্যবসায়ীর মধ্যকার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের নির্মম পরিণতি—যা প্রতিরোধযোগ্য হলেও চরমে পৌঁছায় সহিংসতায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *