জুলাই মাসে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ স্বীকার করে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (Chowdhury Abdullah Al-Mamun) রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানালে, শর্তসাপেক্ষে তাকে ক্ষমা করার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (International Crimes Tribunal)। তবে ক্ষমা পাওয়ার জন্য তাকে নিজের অপরাধের পাশাপাশি সহযোগীদের অপরাধ সম্পর্কেও পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করতে হবে।
শনিবার (১২ জুলাই) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ একটি লিখিত আদেশ প্রকাশ করে। দুই পৃষ্ঠার আদেশে বলা হয়, “চৌধুরী মামুন যদি নিজ অপরাধসহ অভিযুক্তদের সব কর্মকাণ্ড এবং সংশ্লিষ্ট সত্যগুলো প্রকাশ করেন, তাহলে তার ক্ষমা বিবেচনা করা যাবে।”
আদেশে আরও বলা হয়, সাবেক আইজিপি তার আইনজীবীর মাধ্যমে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তার আবেদনে শর্তযুক্ত সম্মতি জানিয়ে বলেন, “মামুনকে প্রত্যেকটি অপরাধ, অভিযোগ ও অভিযুক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে যতটুকু জানেন তা সুনির্দিষ্টভাবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করতে হবে।”
এছাড়া মামুন ট্রাইব্যুনালের যেকোনো সময় তাকে হাজির করে সাক্ষ্য নেওয়ার যে শর্ত তা মেনে ক্ষমা গ্রহণ করেছেন বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়।
একইসঙ্গে ট্রাইব্যুনাল চৌধুরী মামুনের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় এনেছে। আদেশে বলা হয়, “যেহেতু তাকে ক্ষমা করা হয়েছে এবং তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন, তাই কারাগারে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যান্য বন্দিদের থেকে তাকে পৃথক রাখতে হবে।” সংশ্লিষ্ট জেল কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১০ জুলাই, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞের দায় স্বীকার করেন মামুন। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “আমি এই হত্যাযজ্ঞের পেছনের সত্য উন্মোচন করতে চাই। যেসব অভিযুক্তদের বিষয়ে জানি, সব তথ্য দেব।”
এই স্বীকারোক্তির পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina), আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal) এবং মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়।
এই আদেশে স্পষ্ট হলো, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শুধু অপরাধের বিচারই করছে না, বরং অপরাধের অভ্যন্তরীণ গঠন ও ষড়যন্ত্রমূলক চরিত্র উন্মোচনের পথেও এগোচ্ছে। সাবেক আইজিপির মতো উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তার স্বীকারোক্তি ও রাজসাক্ষী হওয়া বিচার প্রক্রিয়ার গতিপথ বদলে দিতে পারে বলেও বিশ্লেষকদের মত।