এনসিপির নিবন্ধন: ২০০ ভোটারের শর্ত পূরণ হয়নি ২৫ উপজেলায়

  • এসব ত্রুটি সারিয়ে তুলতে দলটিকে ১৫ দিন সময় দিয়েছে কমিশন।
  • পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য সরেজমিন যাচাই করা হবে।
  • কোনো দল নির্ধারিত সময়ে তথ্য সরবরাহ না করলে নিবন্ধন পাওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হবে।

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করা নতুন ১৪৪টি দলের সবগুলোই প্রাথমিক বাছাইয়ে ফেল করেছে। নিবন্ধন পাওয়ার জন্য যেসব শর্ত পূরণ করতে হয়, কোনো দলই তার শতভাগ পূরণ করতে পারেনি। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) রয়েছে এই তালিকায়। দলটি ২৫ উপজেলায় ২০০ জন ভোটারের স্বাক্ষর নিতে পারেনি। আবেদনেও রয়েছে কিছু ত্রুটি। এসব ত্রুটি সারিয়ে তুলতে দলটিকে ১৫ দিন সময় দিয়েছে কমিশন।

নতুন দলের নিবন্ধন আবেদনের বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, নিবন্ধন দেওয়ার জন্য আইন অনুযায়ী যেসব শর্ত পূরণের তথ্য দিতে হয়, সব দলেরই সেই তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। ওই সব ঘাটতি পূরণে সব দলকেই ১৫ দিন সময় দিয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।

এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামকে দেওয়া ইসির এক চিঠিতে নিবন্ধন আবেদনে বেশ কিছু ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ত্রুটিগুলোর মধ্যে আছে—ঠিকানাসহ দলের সব কার্যকর জেলা দপ্তরের তালিকা দেওয়া হয়নি; ঢাকা ও সিলেট জেলা দপ্তরের ভাড়া চুক্তিপত্রে দলের নাম উল্লেখ নেই; ঠিকানাসহ সব উপজেলা, থানা দপ্তরের তালিকা দেওয়া হয়নি; ২৫টি উপজেলা/থানায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটার (ন্যূনতম ২০০ জন) সদস্যের অন্তর্ভুক্তি পাওয়া যায়নি; ইটনা উপজেলার ভাড়ার চুক্তিপত্রে দলের নাম উল্লেখ নেই; হালুয়াঘাট উপজেলার ভাড়া চুক্তিপত্রে দলের নাম ও অফিসের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি; আবেদন ফরম-১-এর ফিল্ড নম্বর-৯-এ তহবিলের পরিমাণ উল্লেখ নেই, আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত তহবিলের উৎসের বিবরণীতেও তহবিলের পরিমাণ উল্লেখ নেই; নিবন্ধনের বিষয়ে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তের অনুলিপির শেষ পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর নেই।

দলের গঠনতন্ত্রের অংশে ত্রুটির বিষয়ে ইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আবেদনকারী দলের গঠনতন্ত্রে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা বা ক্ষেত্রমত, জেলা কমিটির সদস্য কর্তৃক প্রস্তুত প্যানেল হতে দলের কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ড কর্তৃক বিবেচনাপূর্বক সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার বিধান রাখা হয়নি। দলটির কোনো দলিলে বা কার্যক্রমে সংবিধানপরিপন্থী নয় এবং দলে বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের (ট্রাইব্যুনাল) অধীনে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি নেই মর্মে দলের প্রধানের ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করা হয়নি।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, কিছু কিছু উপজেলা/থানায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক (ন্যূনতম ২০০ জন) ভোটার সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি; কিছু উপজেলা/থানার বইয়ে অন্য উপজেলা/থানার ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; কিছু ক্ষেত্রে একই ভোটারকে বারবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; ডিমলা উপজেলায় প্রায় ২০ জন সদস্যের এনআইডি নম্বর পাওয়া যায়নি।

২০০ জনের কম ভোটার পাওয়া গেছে এমন ২৫ থানা/উপজেলার মধ্যে নলছিটিতে ১৭৫, হবিগঞ্জ সদরে ১৮১, পলাশে ১৯৩, কালিয়ায় ১৮৪, জলঢাকায় ১৫৮, সোনাগাজীতে ১৮৮, কসবায় ১৩৬, মাদারগঞ্জে ১০৮, সরিষাবাড়ীতে ১৭৬, ধনবাড়ীতে ১৮৫, গংগাচড়ায় ১৬৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে ১৬৯, মধুপুরে ১৪৭, আজমিরীগঞ্জে ১৮৬, ধামরাইয়ে ১৭৪, কর্ণফুলীতে ১৫৭, সাভারে ১৩০, ভেদরগঞ্জে ১৪৯, মনোহরগঞ্জে ১৪৬, উত্তরা পশ্চিমে ১৬৯, ঈশ্বরগঞ্জে ১৯৫, বনানীতে ১৯৪, বাঁশখালীতে ১৩৬, পবায় ১৮০ ও ডিমলা উপজেলায় ১৯৪ জন সদস্য আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনপ্রত্যাশী দলগুলোকে আবেদন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ইসি। পরে এনসিপিসহ ৪৬ দলের অনুরোধে ওই সময় বাড়িয়ে ২২ জুন নির্ধারণ করা হয়। ওই সময় পর্যন্ত ১৪৪টি দল ১৪৭টি আবেদন করে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার থেকে ধাপে ধাপে ১৪৪টি দলকে ত্রুটি সংশোধন করে দিতে চিঠি দিচ্ছে কমিশন। প্রতিটি দলের যেসব তথ্যের ঘাটতি রয়েছে, তা উল্লেখ করে সেই তথ্য দেওয়ার জন্য চিঠিতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য সরেজমিন যাচাই করা হবে। কোনো দল নির্ধারিত সময়ে তথ্য সরবরাহ না করলে ওই দল নিবন্ধন পাওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হবে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *