মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: আহতদের চিকিৎসায় ঢাকায় সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে ঘটেছে ভয়াবহ এক মানবিক বিপর্যয়। প্রাণ হারিয়েছেন বহুজন, আহত হয়েছেন শতাধিক। এমন এক সংকটময় মুহূর্তে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও।

সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের (Singapore General Hospital) সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. চোং সি জ্যাক মঙ্গলবার দিবাগত রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। তাকে অভ্যর্থনা জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় (Ministry of Health) এর প্রতিনিধিরা। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, তিনি মূলত মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত চিকিৎসা টিমকে সহায়তা ও পরামর্শ দিতে এসেছেন। এই আগমন চিকিৎসাসেবায় আন্তর্জাতিক সহমর্মিতার একটি মাইলফলক বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।

বুধবার (২৩ জুলাই) আরও তিনজন বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। তারা হলেন—সিং হেলথের (SingHealth) সিনিয়র ডিরেক্টর বিজয়া রাও, পুন লাই কুয়ান এবং লিম ইউ হান জোভান। জানা যায়, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট (National Institute of Burn and Plastic Surgery) এর একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) রয়েছে। সেই চুক্তির ভিত্তিতে চিকিৎসা সহযোগিতা চাওয়া হয় এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত এই আন্তর্জাতিক চিকিৎসক দল ঢাকায় রওনা দেয়।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান জানান, আহতদের চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যে কেস রিপোর্ট সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে থেকে দ্রুত সাড়া দিয়ে একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও দুজন নার্স ঢাকায় এসেছেন। আশাবাদী, বুধবার থেকেই তারা সরাসরি চিকিৎসা টিমে যুক্ত হবেন।

এদিকে, মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আইএসপিআর (ISPR) মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করলেও রাতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২-এ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (Directorate General of Health Services) এর হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে ২৩ জনই শিশু। অনেক মরদেহ এখনও শনাক্ত হয়নি। এখন পর্যন্ত ২০টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ছয়টি রাখা হয়েছে সিএমএইচ মর্গে।

দুর্ঘটনায় নিহত বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের মরদেহ ইতোমধ্যেই তার নিজ শহর রাজশাহীতে দাফন করা হয়েছে।

আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিকেল ইনস্টিটিউটে। আইএসপিআরের তথ্য অনুসারে, আহত ১৬৫ জনের মধ্যে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৮ জন, বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪৬ জন, ঢাকা মেডিকেলে ৩ জন, সিএমএইচে ২৮ জন, লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ১৩ জন, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০ জন, উত্তরা ক্রিসেন্টে ১ জন, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেলে ১ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ২ জন এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩ জন।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর দ্রুততম সময়ে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা পাওয়াকে অনেকে মানবিকতা ও আস্থার দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন। সামনে আরও সহযোগিতার প্রয়োজন পড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *