রাজনৈতিক মতপার্থক্য নিয়ে বিভেদ নয়, ফ্যাসিবাদের সুযোগ রোধে ঐক্যের ডাক ফখরুলের

রাজনৈতিক মতবিরোধের ‘ছোটখাটো’ বিষয় নিয়ে অস্থিরতা না তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir)। তিনি বলেন, “এসব নিয়ে বিভেদ তৈরি করলে গণতন্ত্র ব্যাহত হবে এবং ফ্যাসিস্ট অপশক্তি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার সুযোগ পাবে।”

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকালে সাভারের আশুলিয়ায় অনুষ্ঠিত বিএনপির (BNP) প্রতিবাদ সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। সমাবেশটি আয়োজিত হয় গত বছর সরকার পতনের আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে—যাদের লাশ ভ্যানে করে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা এখনও জাতিকে নাড়া দিচ্ছে।

ফখরুল বলেন, “আজকে নানা রকম রাজনৈতিক ব্যাখ্যা-অনুবাদ হচ্ছে, গণতন্ত্রে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এমন কিছু করবেন না, যাতে গণতন্ত্র আবার বিপর্যস্ত হয়। যাতে সেই ফ্যাসিস্ট হাসিনা আবার সুযোগ না পায়।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের অনুরোধ, দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার সমস্যা নিরসন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক।”

‘হাসিনার অপশাসন ও লাশ পোড়ানোর নির্মমতা’

বক্তব্যে ফখরুল আশুলিয়ার সেই ঘটনাকে হিটলারের গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “আমি হতবাক হয়ে গেছি। এই দৃশ্য দেখা যায় না। হিটলার যেমন গ্যাসচেম্বারে মানুষকে মেরেছিল, ঠিক তেমনি হাসিনা আমাদের ছেলেদের পুড়িয়ে মেরেছে।”

তিনি বলেন, “কেমন জাতি আমরা! রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমাদের সন্তানদের হত্যা করে পরে আবার পুড়িয়ে ফেলে! একজন মা বলছিলেন—তার ছেলে জীবিত ছিল, সেই অবস্থাতেই তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে।”

এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, “১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট শাসন এই দেশে স্টিম রোলার চালিয়েছে। হাজার হাজার বিএনপি কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।”

‘ভারত থেকে উসকানি দিচ্ছেন হাসিনা’

প্রতিপক্ষের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভারতে পালিয়ে থাকা’ বলে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, “তিনি এখন ভারতে বসে উসকানি দিচ্ছেন, অডিও-ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চাইছেন।”

তার অভিযোগ, “গোপালগঞ্জে ইতোমধ্যেই উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে তার অনুসারীরা। আর এই কারণেই জনগণকে এখন সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।”

‘জাতির বিবেক জাগিয়ে তুলবে শহীদদের স্মৃতি’

সমাবেশের আয়োজনের জন্য ঢাকা জেলা বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, “এই ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনের মাধ্যমে জাতির বিবেক জেগে উঠবে বলে আমি বিশ্বাস করি। শহীদ পরিবারগুলোর বক্তব্য আমাদের দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়।”

সমাবেশে শহীদ পরিবারের সদস্যদের আবেগঘন বক্তব্যে উপস্থিতরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অংশ নেন বাবুল হোসেনের স্ত্রী লাকি আখতার, আরাফাত মুন্সির বাবা স্বপন মুন্সি, বায়েজিদ মুস্তাফিজের স্ত্রী রিনা আখতার, শ্রাবণ গাজীর বাবা আবদুল মান্নান গাজী প্রমুখ।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমান উল্লাহ আমান, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু এবং আমিনুল হক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *