‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে সব কমিটি থেকে নারীদের সিস্টেমেটিক্যালি সাইড করা হচ্ছে’—সামান্তা শারমিন

রাজনীতিতে নারীদের ‘সিস্টেমেটিক এক্সক্লুশন’ বা পরিকল্পিতভাবে বাদ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন সামান্তা শারমিন (Samanta Sharmin)। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম থেকেও নারীদের পরিকল্পিতভাবে সরে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। নারীদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই সাইবার বুলিং, ক্যারেক্টার শেমিং ও আইসোলেশন টুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, অথচ অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টিতে ‘নীরব দর্শক’ হয়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ টাওয়ারে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ ও নতুন বন্দোবস্তের লক্ষ্যে নারীদের প্রত্যয়’ শীর্ষক সেমিনারে এ বক্তব্য দেন সামান্তা। এই আয়োজনে প্রধান ভূমিকা রাখে ‘জাতীয় যুবশক্তি’।

সামান্তা বলেন, “জুলাই আন্দোলনে দেশের প্রতিটি জেলায় মেয়েরা সামনে ছিলেন। তারা স্লোগানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার’। সেই সময় মেয়েরা ফ্রন্টলাইনে থেকে ছেলেদের রক্ষা করেছেন। কিন্তু আজ, সেই মেয়েরাই রাজনৈতিক কমিটি থেকে একে একে বাদ পড়ছেন—সিস্টেমেটিক্যালি।”

তিনি আরও বলেন, “নারীদের বলা হচ্ছে, রাজনীতি তাঁদের জন্য নিরাপদ নয়। পরিবারগুলোকেও বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। অথচ এই মেয়েরাই তখন বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল। আজ তাঁদের সাইবার বুলিং করে, চরিত্র হরণের চেষ্টা করে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে আঙুল তুলে সামান্তা শারমিন বলেন, “সরকার বলে, তাদের কাছে কোনো ডেটা নেই। আমি প্রেস সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি সোজাসাপ্টা বলে দিলেন, ‘ডেটা নাই।’ এমন দায়সারা বক্তব্যে বোঝা যায়, নারীদের বিরুদ্ধে চলমান মানসিক নির্যাতন আর সামাজিক বর্জনের বিষয়টি তাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক।”

সেমিনারে অংশ নিয়ে তাসনিম জারা (Tasnim Zara), এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব, নারীদের রাজনীতিতে অবস্থান ও অংশগ্রহণের সুযোগ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে বলেন, “নারীরা কি রাজনীতি করতে পারবেন, ক্যাম্পেইন করতে পারবেন—এ প্রশ্নগুলো বারবার তোলা হয়। অথচ পুরুষদের বেলায় এ ধরনের প্রশ্ন কেউ তোলে না। নারীদের যোগ্যতা নিয়ে যে সন্দেহ, তা আসলে তাদের পথ রুদ্ধ করতেই ব্যবহৃত হয়।”

তিনি বলেন, “নীতিনির্ধারণে নারীদের অন্তর্ভুক্তি শুধু ন্যায্য নয়, বরং সময়ের দাবি। নিজের সমস্যাগুলো তারা নিজেরাই সবচেয়ে ভালোভাবে জানেন, তাই সমাধানের অংশ হতে হলে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।”

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবিন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল (BNP Women’s Wing) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহীনূর নার্গিস এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (Bangladesh Democratic Student Union)-এর মুখপাত্র আশরেফা খাতুন। সকলেই নারীর প্রতি বিদ্যমান রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেন এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের দাবি তোলেন।

সেমিনারজুড়ে মূল বার্তাটি ছিল পরিষ্কার—রাজনীতি থেকে নারীদের সরে যেতে বাধ্য করার প্রচেষ্টা চলছে পরিকল্পিতভাবে। আর এর বিরুদ্ধে শুধু নীতিগত নয়, সাংগঠনিকভাবেও প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় এখন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *