‘ভুলবশত’ পোস্ট হওয়া প্রবেশপত্রে রাবিতে শিক্ষক নিয়োগে জামায়াতের সাবেক এমপির সুপারিশ ঘিরে সমালোচনার ঝড়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (Rajshahi University)–এর শিক্ষক নিয়োগে জামায়াতপন্থি সাবেক সংসদ সদস্যের সুপারিশের ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের ফেসবুক স্টোরিতে ‘ভুলবশত’ প্রকাশিত একটি প্রবেশপত্র থেকেই ঘটনার সূত্রপাত, যেখানে উল্লেখ ছিল সাবেক এমপি লতিফুর রহমান (Latifur Rahman)–এর সুপারিশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ-এ প্রভাষক পদের জন্য আবেদনকারী আজমীরা আফরিনের প্রবেশপত্রে উল্লেখিত ছিল, সাবেক সংসদ সদস্য এবং রাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য লতিফুর রহমানের সুপারিশের কথা। যিনি ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

শনিবার দিবাগত রাতে প্রবেশপত্রটি স্টোরিতে প্রকাশের কিছুক্ষণের মধ্যেই তা মুছে ফেলা হলেও, এর আগেই স্ক্রিনশট ঘুরতে শুরু করে সামাজিকমাধ্যমে। তাতেই শুরু হয় প্রবল বিতর্ক। অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান পরে ফেসবুক পোস্টে ঘটনাটিকে ‘ভুলবশত’ বলে ব্যাখ্যা দেন। তিনি লেখেন, ‘প্রতিদিন অনেক সিভি ও প্রবেশপত্র আসে। একজন অ্যালামনাস ফোন করে বলেছিলেন তার এলাকার একজন প্রার্থী সম্পর্কে। এরকম ডজনখানেক সুপারিশ রয়েছে আমার কাছে। তবে এসব কোনো পরীক্ষায় প্রভাব ফেলে না।’

তবে ফেসবুক স্টোরির সেই ব্যাখ্যা বিতর্ক থামাতে পারেনি। বরং, সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতারা একে কেন্দ্র করে ব্যাপক সমালোচনা ছুঁড়ে দেন।

সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী মিশু বলেন, “সুপারিশে আসা বাকি সব প্রবেশপত্রও প্রকাশ করা হোক।” ফাহিম রেজা লিখেছেন, “হয় সব সামনে আনুন, নয়তো প্রহসন বন্ধ করুন।”

ছাত্রদল সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহীর কণ্ঠেও ছিল তীব্র ক্ষোভ। তিনি লেখেন, “আমরা কি মিথ্যাবাদী, নাকি মাননীয় উপাচার্য?” এমনকি একজন সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার ব্যঙ্গ করে লেখেন, “স্যারের ছেলে গেম খেলতে গিয়ে বাবার ফোন থেকে প্রবেশপত্র স্টোরিতে দিয়ে ফেলেছে! প্রশ্ন হচ্ছে, রেফারেন্স দেওয়ার সাহস তারা কোথা থেকে পায়?”

প্রবেশপত্রে সুপারিশের বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করলেও, সাবেক জামায়াত এমপি লতিফুর রহমান স্বীকার করেন যে উপ-উপাচার্যকে ফোনে সুপারিশ করেছিলেন। “আমি বলেছিলাম, প্রার্থীর রেজাল্ট ভালো, আবেদনটা দেখবেন। ভাইভায় যেন আগের মতো অনিয়ম না হয়,” বলেন তিনি।

সবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব (Saleh Hasan Naqib) স্বীকার করেন, “২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে প্রশাসনে পরিবর্তন এলেও মানসিকতায় কোনো বদল আসেনি। এখনও শত শত তদবির জমা পড়ে দপ্তরে। আমরা চেষ্টা করছি তদবির, অন্যায় আবদার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে।”

এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি প্রবেশপত্রের ভুল প্রকাশ নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্নটিকে আবারও সামনে এনে দিয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *