জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে হঠাৎ করে রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘এক-এগারোর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে!’ এই মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক উত্তাপ ছড়িয়েছে। বিশেষ করে এমন এক সময়ে, যখন ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের সেই আলোচিত বিদায় ঘটনার এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে—যে অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পোস্টটির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দেখা গেছে ব্যাপক জনসাড়া। মাত্র ৩০ মিনিটে ১২ হাজারের বেশি রিঅ্যাকশন, দুই হাজারেরও বেশি শেয়ার জমা পড়ে। পোস্ট আপডেট করে মাহফুজ লেখেন, ‘তবে, এক-এগারোর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে! তবে জুলাই জয়ী হবে। জনগণের লড়াই পরাজিত হবে না।’ এমন সরাসরি মন্তব্যে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই হতবাক।
উল্লেখ্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থান একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। বিরোধী দল ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের যৌথ লড়াইয়ের মাধ্যমে টানা ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। সেই সময়কার ঘটনা আজও অনেকের মনে গেঁথে আছে। আর এই দিবসটিকে কেন্দ্র করে নানা উদ্যোগ ও উদযাপন চলছে দেশজুড়ে।
তবে এই বিজয়োৎসবের আবহেই উপদেষ্টার এই বার্তা সামাজিক মাধ্যমে বিভাজন তৈরি করেছে।
নেটিজেনদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
মাহফুজ আলমের স্ট্যাটাসের নিচে মন্তব্য করতে দেখা যায় অনেককেই। তাদের মধ্যে রানা সরকার মন্তব্য করেন, ‘সরকারে থেকে এ ধরনের কথা বলা খুবই বেমানান এবং অনুচিত।’
আরেকজন, আল হাসিব খান, সরাসরি প্রশ্ন রাখেন, “১ বছরের মাথায় এমন পরিস্থিতি কেন?” জবাবে উপদেষ্টা মাহফুজ লেখেন, “অনৈক্য এবং স্যাবোট্যাজ।”
তবে সবাই যে তার সঙ্গে একমত তা নয়। তাইফুর রহমান নামে একজন মন্তব্য করেছেন, “১/১১ এর আগে রাজনীতি ও রাজপথে যে বাস্তবতা ছিল, এখন তা অনুপস্থিত বা অন্তত আমাদের কাছে দৃশ্যমান নয়। আপনি যদি এক লাইনে এমন তুলনা করেন, তাহলে মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারে।”
জালাল উদ্দিন আহমেদ নামের একজন লিখেছেন, ‘১/১১ ঠেকানোর একমাত্র উপায় দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন।’
রাজনীতিতে এক-এগারোর প্রভাব ও প্রসঙ্গ অত্যন্ত স্পর্শকাতর। অতীতে এর অভিঘাত ও পরিণতি দেশের গণতন্ত্রে গভীর ছাপ ফেলেছিল। ফলে উপদেষ্টার এমন মন্তব্য শুধু রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, প্রশাসনিক দিক থেকেও উত্তেজনা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এখন দেখার বিষয়, সরকার বা সংশ্লিষ্ট মহল এই পোস্টকে কীভাবে গ্রহণ করে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। মাহফুজ আলমের মন্তব্য যে নিছক ফেসবুক পোস্ট নয়, বরং বড় কোনো ইঙ্গিত বহন করছে—এমনটাই ভাবছেন অনেকে। এর আগে গত সপ্তাহে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফকরুলও এমন আশংকা প্রকাশ করেছিলেন।