চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার হয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ (Abdur Razzak Riyad)। বলছেন, “আমি গরিবের ছেলে, টাকার লোভ সামলাতে পারিনি।” ঢাকার গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের (Shammi Ahmed) বাসা থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
গত রবিবার ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহর আদালতে জবানবন্দি দেন রিয়াদ। জানান, গুলশান থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের বিশ্বাস করে তিনি শাম্মীর বাসায় যান এবং পরে হাতেনাতে ধরা পড়েন। জবানবন্দিতে বলেন, “অপু ও আমি ওই টাকার সমান ভাগ নেই। পুলিশের ফাঁদে পড়ে ধরা পড়েছি।”
রাতের অভিযান ও পুলিশ সংযোগ
১৭ জুলাই রাত ২টার দিকে গুলশান থানার ওসির অনুমতি নিয়ে অভিযানে যান রিয়াদ, অপু, মঞ্জু, সিয়াম, সাদাবসহ কয়েকজন। অভিযানে নেতৃত্ব দেন থানার ওসি (তদন্ত)। তবে শাম্মী আহমেদ বাসায় না থাকায় তারা খালি হাতে ফেরত আসেন।
এরপর সকাল ১০টায় ‘এয়ারপড ফেরত’ দেওয়ার অজুহাতে ফের শাম্মীর বাসায় যান রিয়াদ ও অপু। অপু বাড়ির ভেতরে গিয়ে শাম্মীর স্বামীকে বলেন, “শাম্মী বাসায় আছেন, আমরা তাকে পুলিশে দিয়ে দেব।” এতে ভয় পেয়ে শাম্মীর স্বামী টাকা অফার করেন। অপু ৫০ লাখ টাকা দাবি করলেও শেষমেশ ১০ লাখ টাকা নিয়ে চলে আসেন তারা।
বাকি টাকা আদায়ের চেষ্টা এবং গ্রেফতার
জবানবন্দিতে রিয়াদ আরও জানান, ২৬ জুলাই বাকি ৪০ লাখ টাকা আদায়ের জন্য মুন্না, সাদমান, সিয়ামকে আবার শাম্মীর বাসায় পাঠান। আর তিনি নিজে গুলশান মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ তাকে ওই বাসায় যেতে বলে। “পুলিশের কথা বিশ্বাস করে যাই, তারপর হাতেনাতে ধরা পড়ি,” বলেন রিয়াদ।
আদালতে হাজির এবং কারাগারে পাঠানো
ওই দিন রিয়াদসহ চারজনকে আদালতে হাজির করা হয়। রিয়াদ স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মতি জানান। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান আবেদন করে তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বাকি তিন আসামি—ইব্রাহিম হোসেন, সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাবকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমান।
এদিকে অপর এক আসামি জানে আলম অপু (Jane Alam Apu)-র চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন।
অভ্যুত্থানের পর প্রাইভেটকারে ফিরে যান গ্রামে
জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানায়, জানে আলম অপু রাজধানী থেকে গ্রেফতার হওয়ার আগে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার পুনঘরদীঘি গ্রামে একটি দামি প্রাইভেটকারে গিয়েছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অপু আগে ছাত্রদলে ছিলেন। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
আক্কেলপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক দেওয়ান তানভীন নেওয়াজ বলেন, “সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলে যুক্ত হয়েছে। আমাদের জেলার সম্মান ক্ষুণ্ণ করেছে। আমরা তার শাস্তি চাই।”
অপুর পারিবারিক জীবন নিয়েও রয়েছে নানা তথ্য। তার বাবা আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন অনেক আগেই। মা পুনরায় বিয়ে করেছেন। একমাত্র ছোট বোন রয়েছেন মায়ের কাছেই। গ্রামের বাড়িতে আর যাওয়া হয় না তার। অপুর নানি আখলাকুন্নেসা বকুল বলেন, “মায়ের বিয়ের পর আর তেমন আসেনি।”
অপুর মামি জেসমিন আক্তার জানান, “সে ঢাকায় বড় নেতা হয়েছে শুনতাম। আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখত না। শুনেছি ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়েও করেছে।”