“আগামী নির্বাচন হবে একটি গ্রামীণ মেলার মতো নির্বাচন”—প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Professor Dr. Muhammad Yunus) ঘোষণা করেছেন, তার সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে দায়িত্ব নতুন সরকারের হাতে তুলে দেওয়া। একইসঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তান ও চীনের পাশাপাশি ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। তিনি প্রস্তাব করেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে নেপাল ও ভুটানের মতোই ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলো অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যা বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে পারস্পরিক সুবিধা ভাগাভাগির সুযোগ তৈরি করবে।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক ‘সিএনএ’ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বুধবার এসব কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন ড. ইউনূস।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, শেখ হাসিনার পতনের এক বছর আট দিন পূর্তির প্রেক্ষাপটে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর সাত দিন পূর্ণ হওয়া এই সময়টা ছিল সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি লক্ষ্যের জন্য নিরলস প্রচেষ্টার সময়। তার ভাষায়, “আমরা এমন একটি ব্যবস্থার দায়িত্ব নিয়েছিলাম যা ছিল জালিয়াতি, অপব্যবহার ও শোষণে ভরা, যাতে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার টিকে থাকতে পারে।” তিনি আগের সরকারকে তুলনা করেছেন “রিক্টার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত দেশের” সঙ্গে।

প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট করেন, নির্বাচন আগে হলে সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। “নির্বাচন দিয়ে শুরু করলে পুরনো সমস্যায় ফেরত যেতে হবে,” মন্তব্য করেন তিনি। আগের সরকারের ধরনকে তিনি স্পষ্টভাবে ‘ফ্যাসিবাদ’ বলে উল্লেখ করেন, কারণ সেখানে আইনের শাসন ছিল না। শেখ হাসিনাকে নিয়ে মন্তব্যে তিনি বলেন, “যদি আরও শক্তিশালী শব্দ থাকত, সেটাই ব্যবহার করতাম,” অভিযোগ করে যে তিনি রাস্তায় কাছ থেকে মানুষ হত্যা করেছেন।

শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয়ের প্রসঙ্গে ড. ইউনূস জানান, বাংলাদেশ তাকে ফেরত পেতে যুদ্ধ করবে না। তবে ভারত যেন তাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার সুযোগ না দেয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। “তোমরা তাকে রাখতে পারো, আমাদের বিচার চলবে,” বলেন তিনি।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশ চায় তিন দেশের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক। নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে অর্থনৈতিক জোনে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে সুবিধা ভাগাভাগি করতে পারি।”

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি অবশ্যই বৈধ ও সুন্দর নির্বাচন হতে হবে—যাতে সবাই অংশ নিতে পারে। তার ভাষায়, “এটি একটি মেলার মতো হওয়া উচিত। একটি গ্রামীণ মেলা। তাতে মজা করুন এবং নির্বাচন করুন। এতে কোনও ধরনের উত্তেজনা বা টেনশন থাকবে না। ”

দায়িত্ব গ্রহণের শুরুর দিনগুলোর অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের ডাক ও তাদের ত্যাগ তাকে অনুপ্রাণিত করেছে দায়িত্ব নিতে। প্রথমে না বললেও, আন্দোলনকারীদের অনুরোধ ও দেশের পরিস্থিতি তাকে রাজি করিয়েছে। “তাদের এত ত্যাগের পর আমারও কিছু করা উচিত ছিল,” বলেন ড. ইউনূস।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *