জাতীয় নাগরিক পার্টির (NCP) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ শনিবার ঢাকার বাংলামোটরে এক আলোচনা সভায় তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর যিনি সরকারপ্রধান হয়েছেন, তিনি লন্ডনে গিয়ে সিজদা দিয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই—একজন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান কোনো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসে প্রেস কনফারেন্স করছেন।” তার দাবি, ওই সময়ই সরকারকে লন্ডনে ‘বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে’।
‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচন’ শীর্ষক এই সভায় হাসনাত অভিযোগ করেন, দেশের গণমাধ্যমের বড় অংশ রাজনৈতিক দলের পক্ষাবলম্বন করছে এবং প্রশাসনও দলীয় স্বার্থে কাজ করছে। তিনি বলেন, “সচিবালয়ে অফিস শেষ হয় পাঁচটায়, কিন্তু চারটা থেকেই অনেকে গুলশান বা পল্টনে রওনা দেন। আগে এসব হতো ধানমন্ডি ৩২ কিংবা গুলিস্তানে।”
জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে এনসিপির প্রতি বৈরিতা থাকলেও তাতে রাজনৈতিক বাস্তবতা বদলাবে না বলে মন্তব্য করে তিনি সতর্ক করেন, “৫ আগস্টের ঘটনার মূল কারণগুলো দূর না করলে নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়া সম্ভব নয়। বরং আবারও গণপ্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে।”
দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে হাসনাত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, “কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন যে আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছি, তাহলে আমি এবং আমার সহযোদ্ধারা রাজনীতি ছেড়ে দেব।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি স্পষ্ট করেন, তাদের কোনো সমস্যা নেই টাইমলাইন নিয়ে। নভেম্বর, ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতেই হোক—তারা প্রস্তুত। তবে নির্বাচনের ধরন বদলাতে হবে, আর তা অবশ্যই গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে।
পুরোনো সংবিধানকে ‘ফ্যাসিবাদের পাঠ্যবই’ আখ্যা দিয়ে হাসনাত জোর দিয়ে বলেন, নতুন সংবিধান জরুরি। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি কেউ মনে করেন নতুন দলকে উঠতে দেওয়া হবে না, তাহলে জেনে রাখুন—আমাদের আসন দিয়ে কেনা যাবে না। আমরা বিক্রি হই না।”
সভায় দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী একই দাবি তুলে ধরে বলেন, “গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাদের নিরাপত্তা ও সম্মানের জন্য নতুন সংবিধান অপরিহার্য। কোনো নির্বাচন হলে আগে গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এখন ঘোষণাপত্র লন্ডনে গেছে। আমাদের নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস স্যার বাংলাদেশের মানুষের কাছে যান না, বরং লন্ডনে গিয়ে সিজদা দিয়ে এসেছেন। সেখান থেকে ওহির মতো আদেশ নিয়ে এসেছেন যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। সেটা একটা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে। কোন নির্বাচন? এ সংবিধানের অধীনে।
“তো আপনার সিজদাটা ঠিক হয় নাই। আপনার সিজদা দিতে হবে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। কারণ, জনগণ আপনাকে বসিয়েছেন, সে সিজদার মাধ্যমে আপনি সঠিক দিকনির্দেশনা পাবেন।”