মামুনের মাথার খুলি ফ্রিজে, জ্ঞান ফেরেনি সায়েমের

‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’—এই বাক্যটি লেখা রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মামুন মিয়ার মাথার ব্যান্ডেজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন মামুন। রামদার কোপে তাঁর খুলির (মাথার হাড়) একটি অংশ কেটে ফেলতে হয়েছে। কেউ ভুল করে যেন মাথায় হাত না দেন, সে জন্য কালো কালি দিয়ে ব্যান্ডেজের ওপর এই সতর্কবার্তাটি লেখা হয়েছে।

মামুন এখন চট্টগ্রাম নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুস্থ হওয়ার পর মাথার খুলি পুনরায় প্রতিস্থাপন করতে হবে।

অন্যদিকে একই ঘটনায় গুরুতর আহত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমদ পাঁচ দিন ধরে পার্কভিউ হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন।

তাঁর চেতনার মাত্রা (কনশাস লেভেল) ৫ থেকে ৯-এর মধ্যে ওঠানামা করছে। একটি সুস্থ মানুষের কনশাস লেভেল হয় ১৫। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তাঁর রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা রয়েছে, সুস্থ হতে রয়েছে, সুস্থ হতে সময় লাগবে।
‘ভাইকে শুধু আবার হাঁটতে দেখতে চাই’ : চিকিৎসাধীন সিয়ামের সঙ্গে হাসপাতালে রয়েছেন তাঁর বাবা আমির হোসেন ও মা শাহনাজ বেগম।

ছেলের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তাঁরা।
পার্কভিউ হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার তালুকদার জিয়াউর রহমান শরীফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সিয়ামের অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত। চেতনার মাত্রা ৫ থেকে ৯-এর মধ্যে ওঠানামা করছে। তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচারের পর রক্তক্ষরণের জটিলতা তৈরি হয়েছে। উন্নতি হতে সময় লাগবে।


মামুনের মাথায় অস্ত্রোপচার, খুলি প্রতিস্থাপন বাকি : পার্কভিউ হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার তালুকদার জিয়াউর রহমান শরীফ বলেন, ‘অপারেশনের সময় মামুনের মাথার খুলি খুলে রাখা হয়েছে। এখন অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পরে সুস্থ হওয়ার পর এক থেকে দুই মাসের মধ্যে খুলি পুনঃপ্রতিস্থাপন করা হবে।’

৭ সেপ্টেম্বর চবিতে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী রবিবার একাডেমিক কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেন সেশনজটে না পড়ে, সে জন্যই ক্লাস ও পরীক্ষা যথাসময়ে চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সীমিত পরিসরে কিছু বিভাগে ক্লাস হলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। কয়েকটি বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত থাকলেও একটি বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জামিন হয়নি ৮ গ্রামবাসীর : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আটজন গ্রামবাসীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহার এই আদেশ দেন। চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আসামিরা জামিন আবেদন করলেও আদালত তা মঞ্জুর করেননি।’ সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অজ্ঞাতপরিচয় এক হাজার ৯৫ জনকে আসামি করে মামলা করে। পরদিন সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

প্রোক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি : বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ‘অধিকারসচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’। গতকাল চবির মূল ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা প্রোক্টর অফিসের সামনে অবস্থান নেয়। গত শনিবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় এক ভাড়াটে ছাত্রীকে স্থানীয় এক বাসিন্দার চড় মারাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের প্রথম দফা সংঘর্ষ হয়। পরদিন সংঘর্ষ আরো তীব্র হয়।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উপ-উপাচার্য, শিক্ষার্থী, প্রোক্টরিয়াল বডির সদস্যসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। আহত হন বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাও।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *