পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (Chowdhury Abdullah Al-Mamun) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দ্বিতীয় দিনের জেরার মুখোমুখি হয়েছেন। বৃহস্পতিবারের এ জেরায় তিনি চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরে জানান, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal)-এর বাসায় আওয়ামীপন্থি কিছু পুলিশ কর্মকর্তা নিয়মিত গোপন বৈঠক ও আড্ডা দিতেন। এ কার্যক্রমের খবর নির্ভরযোগ্য সূত্রে তার কাছে পৌঁছাত।
মামুন জানান, যেসব কর্মকর্তা এসব বৈঠকে অংশ নিতেন তাদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবির হারুন অর রশীদ, এসবির মনিরুল ইসলাম, ডিআইজি নুরুল ইসলাম, বিপ্লব কুমার, অ্যাডিশনাল এসপি কাফি, এসি মাজাহার, এসি ফরমান এবং ওসি অপূর্ব হাসান। এভাবে চেইন অব কমান্ড ভেঙে রাজনৈতিক আনুকূল্য পাওয়ার জন্য তারা সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।
এদিন মামুনের দ্বিতীয় দিনের জেরা শেষ হয়। আদালত আগামী ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছে। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, বিএম সুলতান মাহমুদ, তারেক আবদুল্লাহ এবং আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ আরও অনেকে।
আইজিপি থাকাকালে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রসঙ্গও উঠে আসে জেরায়। মামুন জানান, পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াতে স্নাইপার সংযোজন করা হয়েছিল এবং আমেরিকার পক্ষ থেকে এর প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। তবে জুলাই আন্দোলন দমনে এ স্নাইপার ব্যবহৃত হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে তার কোনো তথ্য নেই। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে গুম, আটক ও ক্রসফায়ারের মতো অভিযানের নির্দেশ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আসত। এমনকি আইজিপি হিসেবেও সব বিষয় তার অগোচরে ঘটত।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ পুলিশে আরও গভীর হয়। ডিএমপি কমিশনার হাবিব ও এসবি মনিরুলের নেতৃত্বে দুটি শক্তিশালী গ্রুপ তৈরি হয়, যারা সরাসরি শেখ হাসিনার আনুকূল্য পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় নামে। তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতা ও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদেরও যোগাযোগ ছিল।
এর আগে দেওয়া জবানবন্দিতে মামুন স্বীকার করেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। আইজিপি হিসেবে দায়িত্বে থাকার সময় এত বড় হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হলেও তিনি সেটি রুখতে পারেননি—এ দায় তিনি নিজের কাঁধে নেন।
গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতার জন্য বিবেকের তাড়নায় তিনি নিজ থেকেই রাজসাক্ষী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে আদালতকে জানান। এ মামলায় তিনিই ৩৬তম সাক্ষী।
প্রসিকিউশন সূত্র জানায়, কয়েকজন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া শেষ হলেই যুক্তিতর্ক পর্যায়ে প্রবেশ করবে মামলাটি। তখনই চূড়ান্ত আইনি লড়াই শুরু হবে।