ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও উদ্বেগ নিয়ে সবার আগ্রহ তুঙ্গে। আসন্ন নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা কাকে নেতৃত্বে দেখতে চান এবং তাদের মূল চাহিদাই বা কী—এসব নিয়ে সোচ্চার টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। এতে উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য, যা নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।
ডাকসু নির্বাচন ২০২৫ নিয়ে নির্বাচনী জনমত যাচাই করতে সোচ্চার টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ সার্ভে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ১ আগস্ট ২০২৫ থেকে ২০ আগস্ট ২০২৫ ছাত্র সংগঠনগুলো ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থিতা ও প্যানেল ঘোষণার আগে এ জরিপ করা হয়। জরিপে সর্বমোট অংশগ্রহণকারী ছিল ৯৯১ জন, যেখানে ৩৩% ছিল নারী শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল ছাত্র সংসদ নির্বাচন ২০২৫ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫। অতীতে ডাকসুর মাধ্যমে অসংখ্য সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে, যারা জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
১৯৯০ সালের পর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে সর্বশেষ ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সরকারদলীয় প্রভাব ও অযাচিত হস্তক্ষেপে সে নির্বাচনটি নিয়ে নানা বিতর্ক-সমালোচনা হয়। ৩ জুলাই ২০২৪ ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি হয়ে উঠে ডাকসু নির্বাচন।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নয়, গোটা দেশবাসীর আগ্রহের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ডাকসু নির্বাচন।

প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ
১) ৮৪% শিক্ষার্থী ডাকসুতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ৮৭% শিক্ষার্থী মনে করেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।
২) প্রার্থী বাছাইয়ে যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেবেন ৮২% ভোটার। ৭৪% শিক্ষার্থী মনে করেন, ব্যক্তিগত পরিচয় নয়, বরং যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেওয়া উচিত।
৩) নেতা হওয়ার জন্য নেতৃত্বসম্পন্ন হওয়া জরুরি। পুরুষ ভোটারদের চেয়ে নারী ভোটাররা নেতৃত্বের গুণাবলিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
৪) ৫৮% ভোটার প্রত্যাশা করেন যোগ্য প্রার্থীরা ব্যক্তিগত জীবন, একাডেমিক কাজ এবং সংগঠনিক দায়িত্ব একসাথে সামলাতে সক্ষম হবেন।
৫) ৪৫% শিক্ষার্থী শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্যাম্পাসে নির্যাতিত হয়েছেন। নির্যাতনের হার পুরুষ ৫৮%, নারী ২৪%।
৬) ৭২% শিক্ষার্থী নিজে নির্যাতিত হয়েছেন বা অন্যকে নির্যাতিত হতে দেখেছেন। পুরুষদের মধ্যে এ হার ৮২%।
৭) ৫৩% শিক্ষার্থী মনে করেন ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম হবেন।
৮) ডাকসু প্রতিনিধিদের কাছে শিক্ষার্থীদের কিছু মূল দাবি: গেস্টরুম-গণরুম কালচার ও সহিংসতা বন্ধ করে নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়া, বহিরাগতদের প্রবেশ কমানো, আবাসন ও খাদ্য সংকট দূর করা, একাডেমিক মানোন্নয়ন, এবং শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
৯) ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে যে বৈশিষ্ট্যগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: নেতৃত্বগুণ, সততা, ভদ্রতা, মানবিকতা, প্রজ্ঞা, ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হওয়া।
১০) প্রার্থীদের যে বৈশিষ্ট্যগুলো ভোট না দেওয়ার কারণ: ব্যক্তিত্বহীনতা, মাদকাসক্তি, অশ্লীলতা, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ছাত্র নির্যাতন, ধর্মবিদ্বেষী এবং বদমেজাজি।
১১) ভিপি পদে কোন দল বিজয়ী হবে? অংশগ্রহণকারীদের উত্তর: ছাত্র শিবির (৩২%), স্বতন্ত্র (২২%), ছাত্রদল (৭%), “মতামত নেই” (৩৪%)।
১২) ভিপি পদে কোন দল বিজয়ী হবে-এই প্রশ্নে নারী শিক্ষার্থীদের ৫৪% বলেছেন “মনে নেই”; পুরুষদের মধ্যে এ হার ২৪%।
ডাকসু নির্বাচন সবসময়ই শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতেও রেখেছে গভীর প্রভাব। আসন্ন নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও সার্ভে রিপোর্টে উঠে আসা বার্তাগুলো হয়তো নির্ধারণ করবে নতুন প্রজন্ম কেমন নেতৃত্ব চায়। এখন শুধু অপেক্ষা ৯ সেপ্টেম্বরের, যখন শিক্ষার্থীরা তাদের ভোটের মাধ্যমে জানিয়ে দেবেন তারা কাদের হাতে দেখতে চান ক্যাম্পাসের নেতৃত্ব।