জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের প্রক্রিয়ায় এগিয়ে এসেছে বিএনপি (BNP) ও এনসিপি (NCPC)। জতীয় ঐকমত্য কমিশনের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এই দুই দলের পাশাপাশি আরও ১৩টি রাজনৈতিক দল তাদের প্রতিনিধিদের নাম পাঠিয়েছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami), ইসলামী আন্দোলনসহ ১৫টি দল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নাম পাঠায়নি। তবে কমিশনের আশাবাদ, অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই বাকি দলগুলোও তাদের প্রতিনিধিদের নাম জানাবে।
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, “জুলাই সনদের বিষয়ে দলগুলোর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সমীচীন হবে না। আমরা তাদের বক্তব্যের অপেক্ষায় আছি, তারপরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।” কমিশনের পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে প্রতিটি দলকে দুইজন প্রতিনিধির নাম পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
বিএনপির পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের নাম পাঠানো হয়েছে। এনসিপির পক্ষ থেকে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নাম কমিশনের হাতে পৌঁছেছে। তবে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন জানিয়েছেন, সনদে স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তারা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবেন।
এনসিপি ইতোমধ্যেই তাদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে সনদ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছে। সেখানে তারা সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে অনড় থাকার পাশাপাশি রাজনৈতিক আন্দোলনের কৌশল গ্রহণ করেছে। সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় গণপরিষদ থাকবে কি না, সেটিকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করছে দলটি।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে শর্ত দিয়ে জানানো হয়েছে, সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া স্পষ্ট হলে তবেই তারা প্রতিনিধির নাম পাঠাবে। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, “সনদ হলে তবেই স্বাক্ষরের বিষয় আসবে। কমিশনের আজকের বৈঠক দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”
ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন জানিয়েছেন, তাদের পক্ষ থেকেও প্রতিনিধি পাঠানো হবে। তবে তারা ‘নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতি’র দাবি নিয়ে আপস করবে না। এ বিষয়ে সমমনা দলের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান সনদে কিছু জরুরি সংশোধনের দাবি তুলে ধরে প্রতিনিধির নাম পাঠানোর কথা জানিয়েছেন। একইভাবে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছেন, শর্তসাপেক্ষে তারা প্রতিনিধি পাঠাবেন, তবে দাবি পূরণ না হলে সনদে স্বাক্ষর করবেন না।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স জানিয়েছেন, প্রতিনিধির নাম পাঠাতে তাদের আরও কিছুটা সময় লাগবে। সংবিধানের চার মূলনীতি অক্ষুণ্ণ রাখার দাবিকে যদি উপেক্ষা করা হয়, তবে সনদে স্বাক্ষর করবে কি না—তা নতুন করে ভেবে দেখবে দলটি।
বাসদ (মার্কসবাদী) প্রতিনিধির নাম পাঠালেও সনদের নানা বিষয়ে একাধিক আপত্তি জানিয়েছে। অপরদিকে নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার বলেন, তাদের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ঢাকার বাইরে থাকায় এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে রাতের মধ্যেই সিদ্ধান্ত হতে পারে।
দলগুলোর হাতে আগে দুদফায় খসড়া দেওয়া হলেও গত বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত জুলাই সনদ পাঠিয়েছে জতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এতে সবার মতামতের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে এবং আর কোনো সংশোধনী নেওয়া হবে না। স্বাক্ষরের সময় ও স্থান পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে আজ রবিবার দুপুর আড়াইটায় সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণে আবারও বৈঠকে বসছে ঐক্যমত্য কমিশন। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)। কমিশন মনে করছে, তার দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যের পর অনেক দলই তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে পারে।