এনসিপি সহ ছয় নতুন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ ছয়টি নতুন রাজনৈতিক দলকে চূড়ান্ত নিবন্ধন দিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের স্বাক্ষর সম্পন্ন হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে ইসি। দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিবন্ধন প্রক্রিয়ার ফাইল কমিশনের অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে। তবে কমিশন চাইলে প্রস্তাবে সংযোজন বা বিয়োজন করতে পারবে।

সূত্র জানায়, মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাই শেষে যেসব ২২টি দল চূড়ান্তভাবে আলোচনায় এসেছে, সেখান থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি এবং বাংলাদেশ জাতীয় লীগসহ মোট ছয়টি দলকে নিবন্ধনের জন্য নথিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট শাখার কার্যক্রম রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) স্বাক্ষরিত হয়।

এছাড়া, ছয় দলের ফাইল কমিশনের কাছে তোলা হলেও আরও ১০ দলের বিষয়ে পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৯ দলের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে পুনঃতদন্ত এবং একটি দলের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে ইসির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে। অন্যদিকে ৬ দলের আবেদন সরাসরি বাতিল করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব আলী নেওয়াজ ২০টি দলের শুনানি নেন, যেখানে দুটি দল অনুপস্থিত ছিল। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করলে ১৪৩টি নতুন রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। তবে প্রথম ধাপে কোনো দল শর্ত পূরণ করতে না পারায় তাদের সময় দেওয়া হয়। এরপর জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ ৮৪টি দল ঘাটতি পূরণ করে নথি জমা দিলেও, এর মধ্যে ৬২টি দল শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়। ফলে অবশিষ্ট ২২টি দলের মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে শুনানি সম্পন্ন করে কমিশন।

যে ২২টি দলের মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করা হয়েছে সেগুলো হলো: ফরোয়ার্ড পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাহজাহান সিরাজ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলুশন পার্টি এবং নতুন বাংলাদেশ পার্টি।

আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে হলে একটি দলের থাকতে হবে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় ও ১০০ উপজেলায় কমিটি, এবং প্রতিটি কমিটিতে ন্যূনতম ২০০ ভোটারের সমর্থনপত্র। এর বাইরে কোনো দলের প্রাক্তন সংসদ সদস্য থাকা বা আগের নির্বাচনে অন্তত ৫ শতাংশ ভোট পাওয়া থাকলেও নিবন্ধনের যোগ্যতা অর্জিত হয়। এসব শর্ত ছাড়াও নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে আবেদন জমা দিতে হয়।

পুরো প্রক্রিয়ায় প্রথমে আবেদন বাছাই করা হয়, তারপর সরেজমিন তদন্ত ও বাছাই শেষে অভিযোগ-আপত্তির বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সেখানে আপত্তি এলে শুনানি করে নিষ্পত্তি করে কমিশন। সবশেষে কোনো আপত্তি না থাকলে নিবন্ধন সনদ প্রদান করে নির্বাচন কমিশন। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দল নিজস্ব প্রতীকে ভোটে অংশ নিতে পারে না।

বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫১টি (আওয়ামী লীগসহ)। নতুন ছয় দল যুক্ত হলে মোট নিবন্ধিত দল দাঁড়াবে ৫৭টি। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই দল নিবন্ধনের প্রথা চালু করে নির্বাচন কমিশন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *