জামালপুরের মাদারগঞ্জে এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিস্ময়কর অভিযোগ উঠেছে—মাসের পর মাস মাদ্রাসায় না আসলেও হাজিরা খাতায় সাক্ষর করে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন তিনি। অভিযুক্ত মাওলানা মো. আব্দুল ওয়াহেদ (Abdul Wahed) এক সময়ের উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর এবং বর্তমানে মাদারগঞ্জ আল আকাবা সমবায় সমিতির পরিচালক।
জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে ওই সমবায়ের কয়েকশো কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রাহকরা মামলা দায়ের করলে মামলার অন্যতম আসামি অধ্যক্ষ ওয়াহেদ আত্মগোপনে চলে যান। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। কিন্তু পলাতক থেকেও তিনি নিয়মিত মাদ্রাসার হাজিরা খাতায় সই দিয়ে বেতন তুলে নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে জামায়াত থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ফরহাদ হোসেন (Farhad Hossain)। তবে জামায়াত ত্যাগের পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মামুনুর রশীদ জানান, অধ্যক্ষ ছুটি নিয়েছেন বলে তিনি জানেন, তবে ৩ মাসের ছুটি নিয়ে ৬ মাস ধরে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।
মাদ্রাসার শিক্ষকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, জানুয়ারি থেকে অধ্যক্ষ ওয়াহেদ মাদ্রাসায় অনুপস্থিত, তবুও তার বেতন উত্তোলনের বিষয়টি বিস্ময়কর। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রহমতুল্লাহ, আশিনুর, মিলন হাসানসহ আরও কয়েকজন বলেন, তারা দীর্ঘ ৫-৬ মাস অধ্যক্ষকে মাদ্রাসায় দেখেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু বক্বর সিদ্দিক বলেন, “মাদ্রাসায় না এসে বেতন তোলা দুঃখজনক। কর্তৃপক্ষ যেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়।”
অধ্যক্ষ ওয়াহেদ সম্পর্কে আরও জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের (৫ আগস্ট ২০২৪) পর তিনি প্রতিষ্ঠানটির ৩ কর্মচারীর বেতন বন্ধ করে দেন, যা স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ, তার একগুঁয়ে আচরণে পুরো প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে, কিন্তু কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলতে সাহস পায় না।
অভিযোগ সম্পর্কে অধ্যক্ষ ওয়াহেদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়, ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাদির শাহ (Nadir Shah) বলেন, “মাদ্রাসায় না এসে হাজিরা খাতায় সই করে বেতন নেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”