“আমি বললাম একটা জিনিস পোড়াতে, ওরা পুড়িয়ে দিল সেতু ভবন”: ট্রাইব্যুনালে হাসিনার ফোনালাপ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম জানিয়েছেন, জুলাই আন্দোলনের সময় সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)। কিন্তু, প্রসিকিউটরের দাবি, তিনি যা যা পোড়াতে বলেছিলেন সেগুলো না পুড়িয়ে অন্যস্থানে — বিশেষ করে সেতু ভবনে — আগুন দেয়া হয়েছে। মিজানুল ইসলামের ভাষায়, আদৌ নির্দেশনা দিতে চেয়েছিলেন মূলত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ঘটনাগুলোর তদন্তের অংশ হিসেবে দেয়া জবানবন্দি এবং রেকর্ডশোনার প্রেক্ষিতে এই অভিযোগ তোলা হয়। প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস (Sheikh Fazle Noor Taposh)-এর সঙ্গে শেখ হাসিনার ফোনালাপের অডিও রেকর্ডে এসব কথা স্পষ্ট। তিনি বলেন, “আমি বললাম একটা জিনিস পোড়াতে, যা যা পোড়াতে। ওরা পুড়িয়ে দিলো সেতু ভবন।” — অর্থাৎ, আগুন দেওয়ার নির্দেশনার উৎস তিনি নিজেই।

একই দিনে জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ৫৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা। জবানবন্দিতে তিনি জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার কথোপকথনের ৬৯টি অডিও ক্লিপ ও তিনটি মোবাইল নম্বরের কল রেকর্ড জব্দ করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মিজানুল ইসলাম আরও জানান, শুধু তাপসের সঙ্গে ফোনালাপ নয়—জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (Jatiya Samajtantrik Dal)-এর সভাপতি হাসানুল হক ইনু (Hasanul Haq Inu)-র সঙ্গে দুইটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামালের একটি ফোনালাপও ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর উদ্ধৃতভাবে বলেন, ইনুর সঙ্গে ৫ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের একটি ফোনালাপে ইনু শেখ হাসিনাকে বিগত সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘আপনার ডিসিশনটা খুবই কারেক্ট হইছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনি একটু দয়া করে অ্যারেস্ট করে ফেলতে বলেন সবাইকে। তাহলে আর মিছিল করার লোক থাকবে না।’ শোনানো রেকর্ড অনুযায়ী, শেখ হাসিনা ইনুর বক্তব্যে সম্মতি জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা রণক্ষেত্রের সাথী।’

রেকর্ডে আরও দেখা যায়, ইন্টারনেট চালুর প্রসঙ্গ উঠলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কীভাবে ইন্টারনেট চালু করব? ওরা ইন্টারনেট পুড়িয়ে দিয়েছে। ইন্টারনেট আমি আর চালু করতে পারব না। অন্য সরকার এসে করলে চালু করবে।’ 이에 ইনু মন্তব্য করেন, ‘বাংলাদেশে আর অন্য সরকার আসবে না।’ জামায়াত-শিবির সম্পর্কে ইনু পরামর্শ দেন তাদের তালিকা করে সবগুলোকে ধরে ফেলতে এবং তাদের ‘মেরুদণ্ড ভেঙে’ দেয়ার আহ্বান জানান—যা নিয়ে শেখ হাসিনা সম্মতিও দেন।

ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত ওই ফোনালাপ ও রেকর্ডগুলো আলোচনা এবং সাক্ষ্যগ্রহণের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; মামলা ও তদন্তের বিবরণাদি ট্রাইব্যুনালের নথিতে প্রতিফলিত হবে বলেই বলা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *