ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের বহুল আলোচিত ব্যালট পেপার অরক্ষিতভাবে ছাপা হয়েছে নীলক্ষেতে—এমন তথ্য উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, সর্বোচ্চ গোপনীয়তায় উন্নতমানের ছাপাখানায় ব্যালট ছাপানো হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার পরম্পরা, সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য ও প্রাপ্ত তথ্য বলছে, নীলক্ষেতেই দায়সারাভাবে ছাপানো হয় নির্বাচনের ব্যালট।
আরও জটিলতা তৈরি হয়েছে ব্যালটের সংখ্যায় গরমিল নিয়ে। ছাপাখানা, কাটিং সেন্টার এবং সরবরাহকারীর তথ্যে এসেছে একেক রকম হিসাব।
নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন (Mohammad Jasim Uddin) শুরুতে দাবি করেছিলেন, নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটে এ ধরনের ব্যালট ছাপার সুযোগই নেই। তার ভাষ্য, “কারণ ওই মেশিনটা ওখানে (গাউসুল আজম মার্কেট) থাকবে না।”
কিন্তু নিউজ২৪ টেলিভিশনের অনুসন্ধান দল গিয়ে দেখতে পায়, জালাল প্রেস নামের একটি ছাপাখানা ব্যালট ছাপতে সক্ষম। প্রেসের মালিক মো. জালালও স্বীকার করেন, ডাকসু নির্বাচনের ব্যালট তাদের প্রেসেই ছাপা হয়েছে। তিনি জানান, মো. ফেরদৌস নামে এক ব্যক্তি তাকে এই কাজ দেন। তিন দিনের মধ্যেই ছাপার কাজ শেষ হয়, এবং ৭ সেপ্টেম্বর ছিল ব্যালট ডেলিভারির শেষ তারিখ।
জালালের ভাষ্যে, খোলামেলা পরিবেশে, এমনকি বন্ধও ছিল না প্রেসের সাটার। তার প্রেস থেকে নেওয়া হয় ৪৮ হাজার কাগজ, যাতে মোট ব্যালট দাঁড়ায় ৯৬ হাজার। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী ভোটার সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন।
এরপর তদন্তকারীরা খোঁজ পান মক্কা পেপার কাটিং হাউসে। দোকানটির মালিক ও কর্মীরা জানান, ফেরদৌস নামে এক ব্যক্তি সেখানে ব্যালট কাটিংয়ের কাজ দেন। রাত দেড়টার মধ্যে কাজ শেষ হয়। তাদের হিসেবে কাটা হয় ২২ রিম কাগজ, যাতে ব্যালটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৮ হাজার। অর্থাৎ জালাল প্রেস ও মক্কা কাটিংয়ের হিসাবের মধ্যে আছে ৮ হাজার ব্যালটের গরমিল।
এদিকে ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছাপা ও গণনার দায়িত্বে ছিল আঞ্জা করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন (Zahid Hossain) প্রথমে স্বীকার করেন, তারাই ব্যালট ছাপিয়েছে, তবে তা হয়েছে কেরানীগঞ্জে তাদের প্রেসে। তবে পরে দায় চাপান কর্মচারীদের ওপর। তিনি জানান, তারা ছাপিয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ব্যালট।
কিন্তু হিসাব অনুযায়ী, ডাকসুর ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন ভোটারের প্রত্যেকের জন্য ছয়টি ব্যালট পাতা প্রয়োজন ছিল। সেই হিসাবে ব্যালটের মোট সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় দুই লাখ ৩৮ হাজার ৬৫০। অথচ নীলক্ষেতের দুই দোকান এবং আঞ্জা করপোরেশনের হিসাব সব ভিন্ন।
সবশেষে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনকে এসব তথ্য জানানো হলে তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত বিশেষায়িত প্রক্রিয়া, যার মেশিনের দামই কোটি টাকার কাছাকাছি। একমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে আবেদন করেছিল। তবে নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপার প্রমাণ যদি সত্যিই থাকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। তথ্যসূত্র : নিউজ২৪