রিকশা থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়েছিল: মাওলানা মামুনের নিখোঁজের বর্ণনায় চমকপ্রদ তথ্য

রাজধানীর তুরাগ থেকে নিখোঁজ হওয়ার ১০৪ ঘণ্টা পর পূর্বাচল থেকে উদ্ধার হওয়া জুলাই যোদ্ধা মাওলানা মামুনুর রশীদ জানালেন তাকে কৌশলে রিকশায় তুলে, পরে একটি মাইক্রোবাসে করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ‘আমার দেশ’ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেন তার নিখোঁজ থাকার পুরো অভিজ্ঞতা।

মাওলানা মামুন বলেন, “প্রতিদিনের মতো ফজরের নামাজের পর হাঁটতে বের হয়েছিলাম। এসময় তিনজন ব্যক্তি রিকশায় করে এসে আমাকে বলেন, ‘ভাই, আমরা প্রতিদিন কাঁচাবাজারে গিয়ে চাঁদাবাজির শিকার হই। আমাদের সঙ্গে একটু আসেন।’ প্রথমে যেতে চাইনি, কিন্তু বারবার অনুরোধে রাজি হয়ে উঠি।”

তিনি জানান, কামারপাড়া স্ট্যান্ড পার হওয়ার আগে ওই তিন ব্যক্তি রিকশার ভাড়া মিটিয়ে দেন। এরপর কাঁচাবাজারের সামনে রিকশা থামতেই একটি হাইস মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায়। “মাইক্রোবাসে তখন ভেতরে তিনজন ছিল। বাইরে থাকা তিনজন হঠাৎ করেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে তুলে ফেলে। এরপর তারা আমাকে এক ব্যক্তির—সাব্বিরের—ছবি দেখায়। আমি বলি, ‘হ্যাঁ, চিনি।’ এরপরই আমার জ্ঞান হারিয়ে যায়,” বলেন মামুন।

তিনি সন্দেহ করছেন, তাকে চেতনা নাশক কোনো কিছু প্রয়োগ করা হয়েছিল। “এরপর আর কিছুই মনে নেই,” যোগ করেন তিনি।

জ্ঞান ফিরে কী অবস্থা ছিল জানতে চাইলে মামুন বলেন, “চেয়ারেই আমাকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। কখন ঘুমিয়েছি, কখন জেগেছি কিছু মনে নেই। হঠাৎ কয়েকজন আমার মুখে পানি ছিটালে জ্ঞান ফিরে আসে। তখন দেখি আমি পূর্বাচলের মসজিদের পাশে।”

উল্লেখ্য, গত ২২ সেপ্টেম্বর ভোরে মাওলানা মামুনুর রশীদ (Maulana Mamunur Rashid) রাজধানীর তুরাগের হানিফ আলী মোড় এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর স্থানীয়রা তাকে পূর্বাচল (Purbachal) শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামের পাশে একটি নির্জন জায়গায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে ১ নম্বর সেক্টরের মসজিদে নিয়ে যান। সেখান থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে উত্তরার চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল (China-Bangladesh Friendship Hospital)-এ ভর্তি করে।

মাওলানা মামুন এক সময় তুরাগ থানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি গত জুলাই মাসে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে (July Mass Uprising) উত্তরা এলাকায় রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

ঘটনার পরদিনই, অর্থাৎ ২২ সেপ্টেম্বর তুরাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী খাদিজা বেগম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *