পুলিশের হেফাজতে যুবকের মৃত্যুতে জনতার বিক্ষোভ, ক্যাম্প ইনচার্জ গ্রেফতার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে চুরির অভিযোগে আটক এক যুবক পুলিশের হেফাজতে পাঁচ দিনের নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত যুবকের নাম আব্দুল্লাহ (২৩)। তিনি উপজেলার তেজখালী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। আজ সকালে উত্তেজিত জনতা সলিমগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্প ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে অংশ নেন।

নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ অনুযায়ী, গত ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সলিমগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে আব্দুল্লাহকে চুরির সন্দেহে আটক করা হয়। গণপিটুনির পর তাকে সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হলেও হাসপাতালে না পাঠিয়ে গোপনে পাঁচদিন ধরে আটকে রাখা হয়। এসময় এসআই মহিউদ্দিন ও এসআই মোবারক তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান। অভিযোগ রয়েছে, এই নির্যাতনের ফলেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয় আব্দুল্লাহকে।

গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ক্যাম্পেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। অসহায় কণ্ঠে বারবার পানি চাইলেও সাড়া মেলেনি বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরে অলিউর রহমান জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দ্রুত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু পথে মারা যান আব্দুল্লাহ।

এই ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই সাকিল মিয়া নবীনগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সলিমগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ মো. মহিউদ্দিন, স্থানীয় তবির মিয়া ও আলামিনসহ চারজনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিকল্পিতভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমেই আব্দুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওসি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অনুমতি ছাড়াই আব্দুল্লাহকে ক্যাম্পে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। একই অভিযানে আরও দুজনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হলেও আব্দুল্লাহকে আদালতে তোলা হয়নি। এই গোপনীয় পদক্ষেপে ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে।

আজ সকালে স্থানীয়রা ক্যাম্প ঘেরাও করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাময়িকভাবে ক্যাম্পের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে জেলা পুলিশ প্রশাসনও দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। জেলা পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক (Ehteshamul Haque) নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযুক্ত ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই মহিউদ্দিনকে আটক করেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

নবীনগরের এই মর্মান্তিক ঘটনাটি আবারও পুলিশের হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে। মানবাধিকার কর্মী এবং স্থানীয়রা সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি তুলেছেন। প্রশাসনের গাফিলতি ও দায়সারা মনোভাব নিয়েও তীব্র সমালোচনা উঠেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *