যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নতুন ধারার সংবাদমাধ্যম জিটিও’র সাংবাদিক মেহদি হাসানকে সাক্ষাৎকার দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)। সোমবার প্রকাশিত এ সাক্ষাৎকার ঘিরে বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে তিনি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে দেওয়া মন্তব্য দেশজুড়ে তোলপাড় তুললেও ড. ইউনূস স্পষ্ট করেছেন যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। কেবল তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রয়েছে। তবে এটি যে কোনো সময় প্রত্যাহার করা সম্ভব বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
বিতর্কটি শুরু হয় যখন অনেক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, ড. ইউনূস নাকি বলেছেন আওয়ামী লীগের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হতে পারে। তবে প্রকৃতপক্ষে সাক্ষাৎকারে তিনি কী বলেছেন, সেটি তুলে ধরা হলো হুবহু—
মেহদি হাসান: হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে, আপনার সরকার তাঁর দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে, তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে, যার ফলে কার্যত তাদের পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধা তৈরি হয়েছে। আপনার সহকর্মী নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অমর্ত্য সেন, যাকে আপনি খুব ভালোভাবে চেনেন, তিনি লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে এটি কেবল পূর্ববর্তী সরকারের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে, যারা ক্ষমতায় এসে বিরোধীদের নিষিদ্ধ করেছিল। আপনি শুধু সেই চক্রের পুনরাবৃত্তি করছেন। অমর্ত্য সেন এবং অন্যদের এই সমালোচনার জবাবে আপনার কী বলার আছে?
ড. ইউনূস: এটি ভুল সমালোচনা, কারণ আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি।
মেহদি হাসান: মানে, আপনারা কি তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছেন?
ড. ইউনূস : না, নিবন্ধন নয়। কেবল তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
মেহদি হাসান : এর মানে কী?
ড. ইউনূস : এর মানে হলো তারা কোনো রাজনৈতিক কার্যকলাপ করতে পারবে না।
মেহদি হাসান : তাহলে আপনারা তো কার্যত…মানে, তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না।
ড. ইউনূস : না, দলটি এখনো আছে।
মেহদি হাসান : তারা কি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে?
ড. ইউনূস : এখন নয়, কারণ কার্যক্রম নিষিদ্ধ।
মেহদি হাসান : ঠিক আছে, তাহলে (আগের সরকারের) পুনরাবৃত্তি নিয়ে যে সতর্ক করা হয়েছিল, তা থেকে এটি কীভাবে ভিন্ন?
ড. ইউনূস: তারা একটি দল হিসেবে বৈধ রয়েছে। তবে আপাতত তাদের কার্যক্রম স্থগিত। আমি বলতে চাচ্ছি, যেকোনো সময় এটি উন্মুক্ত করা যেতে পারে।
মেহদি হাসান : আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনারা স্থগিত কার্যক্রম আবার শুরু করতে দিতে পারেন?
ড. ইউনূস : স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া যেতে পারে, এমন সম্ভাবনা আছে।
মেহদি হাসান: আপনারা দলটি নিষিদ্ধ করেননি। আপনারা শুধু বলেছেন যে আপাতত তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
ড. ইউনূস: ঠিক তাই।
মেহদি হাসান : কিন্তু একটি গোষ্ঠীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখা কীভাবে গণতান্ত্রিক হতে পারে?
ড. ইউনূস: এটি নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই দলের কার্যপ্রণালী দেখে এবং সম্ভাবনা বিবেচনা করে দেখেছে যে তারা পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে। তাই তারা মনে করেছে, এটা না করাই ভালো—
মেহদি হাসান : কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই অস্বীকার করবেন না যে বাংলাদেশে তাদের লাখ লাখ সমর্থক রয়েছে।
ড. ইউনূস : আমি লাখ লাখ বলব না। তাদের সমর্থক আছে, কিন্তু কতজন অবশিষ্ট আছে তা আমি জানি না, কারণ সমর্থক হলো এমন যে আপনি এতই শক্তিশালী, এই কারণেই আমি সব সময় আপনার কাছে যাই, কারণ আপনি ক্ষমতাশালী। আপনি হয়তো সমর্থকও নন।
মেহদি হাসান : কিন্তু আপনি তো অস্বীকার করছেন না যে বাংলাদেশে তাদের একটি ভোটার গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের কোনো সমর্থন নেই?
ড. ইউনূস: নিশ্চয়ই। এটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার।
মেহদি হাসান : কিন্তু এখন সেই মানুষদের কোনো কণ্ঠস্বর নেই। আপনারা তাদের দলকে নিষিদ্ধ করেছেন। আমি বলছি, আপনারা তাদের দলকে রাজনীতিতে অংশ নিতে বাধা দিচ্ছেন।
ড. ইউনূস: তারা ভোট দিতে পারে। ভোটার হিসেবে তারা বৈধ ভোটার। অনেক অংশগ্রহণকারী রয়েছে। তারা নিজেদের নেতা বেছে নেবে…