গনভবনের যাদুঘরে বক্ষবন্ধনী দেখাবেন? প্রশ্ন আনিস আলমগীরের

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’-এ রূপান্তর করা হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ফ্যাসিবাদী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারতে পালিয়ে যান। এরপর অভ্যুত্থানের স্মৃতিরক্ষার্থে গণভবনকে জাদুঘরে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। অভ্যুত্থানের স্মৃতিরক্ষায় নির্মিত এ জাদুঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবে আওয়ামী লীগ। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতা ছাড়ার পর তার বাড়িতেও হামলা হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক আনিস আলমগীর।

সম্প্রতি সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজের ইউটিউব চ্যানেল ‘ভয়েস বাংলা’র এক শোতে অংশ নিয়ে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর ভাঙার কথা বলেন আনিস আলমগীর। অপরদিকে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ‘ষড়যন্ত্র : ভেতরে ও বাইরে’ শীর্ষক টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি ড. ইউনূসের বাড়ি এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকে হামলার কথা বলেন।

আনিস আলমগীর বিগত ১৫ বছরে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের সময় বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি আওয়ামীপন্থি সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি। দীর্ঘদিন আওয়ামী ঘরানার মালিকানাধীন আজকের পত্রিকায় চাকরি করেছেন তিনি। এছাড়াও শেখ হাসিনার আমলে একটি পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে সে সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন।

মোস্তফা ফিরোজের শোতে আনিস আলমগীর বলেন, ‘আমি বেঁচে থাকি কি না জানি না। আপনি লিখে রাখেন, এই গণভবন আরেকদিন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হবে। এখানে যে স্মৃতি জাদুঘর বানাচ্ছে না! আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো দলের কেউ যদি আবার ক্ষমতায় আসেÑপ্রথম যেটা ভাঙবে, সেটা হচ্ছে এই স্মৃতি জাদুঘর। কারণ, আপনি জাদুঘর জাদুঘরের জায়গায় করবেন।’

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কেন স্মৃতি জাদুঘর বানাবেন এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘ওই খানে কী দেখাবেন? বক্ষবন্ধনী দেখাবেন? যেগুলো দেখিয়েছিলেন? কী দেখাবেন? ওই খানে যেগুলো দেখাচ্ছেন আপনি, যেগুলো হত্যা-নির্যাতন শেখ হাসিনার আমলে যে কয়দিন জুলাই মাসে হয়েছিল, সেগুলো দেখানোর আর কোনো জায়গা পান নাই!’

গত ১৫ বছরে পতিত শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারে পরিণত হন এই গণভভনে থেকে। তার সেই বাসভবনকে ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ‍্যুত্থানের পর জাদুঘরে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এখানে অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, সংগ্রাম, শহীদ এবং বিজয়ের স্মৃতিচিহ্ন রাখা হবে।

এদিকে, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ওই শোতে আনিস আলমগীর বলেন, ‘ড. ইউনূস ৫ আগস্টের পর যে সংস্কৃতি বাংলাদেশে প্রবর্তন করেছেন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভাঙা দিয়ে যে মব কালচার চালু করেছেন রাষ্ট্রীয় নীরবতায়, দেশের মধ্যে একে ও মারতেছে, এ কালচার কি বিস্তৃত হবে না!’

এ পর্যায়ে তাকে থামিয়ে উপস্থাপক প্রশ্ন করেন, ৫ আগস্টের পর এই সংস্কৃতির উৎপত্তি হলে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মইনুল রোডের বাড়ি কারা ভাঙল, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর দুই মাস পরপর কে খুঁড়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন?

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে রাষ্ট্রীয় নীরবতা ও স্পন্সরে যেগুলো হলো ৩২ নম্বর ভাঙা হলো, আগুন দেওয়া হলো এবং অন্যান্য জায়গায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক যে আক্রমণগুলো হলো, উদাহরণ দিলামÑমুক্তিযোদ্ধাদের গলায় জুতার মালা দেওয়া, সাবেক সিইসি থেকে শুরু করে… এবং ভুয়া মামলা তো আছেই। এই কালচারের পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলেছিলাম, ড. ইউনূস আমাদের যে ইনক্লুসিভ সোসাইটির কথা বলেছিলেন, যেখানে আমাদের একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেটা উনি রুদ্ধ করে দিয়েছেন। সেই রুদ্ধ করার পরিপ্রেক্ষিতে ওনার বাড়িতেও কিন্তু আক্রমণ হবে, ওনারা যদি ক্ষমতা থেকে চলে যান। ওনার যে গ্রামীণ ব্যাংক, সেগুলোর ওপরও আক্রমণ হবে। পরবর্তীতে আমাকে কিছু বলল যে, আমি নাকি উসকে দিয়েছি। না, আমি উসকে দিইনি। আমি বলছি, এই কালচার কিন্তু হবে। এই কালচার এখন দেখতেছেন আপনি, আরো কিন্তু চলবে। আরো কেন চলবে? কারণ, আপনি দেশে তাদের রাজনীতিকে (আওয়ামী লীগের) নিষিদ্ধ করে রেখেছেন। দেশের মধ্যে তারা কথা বলতে পারে না। দেশের মধ্যে যখন একটি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সদস্যও মুখ খুলতে পারে না, তাদের ঘরে গিয়ে আপনি ধরে আনেন, তাদের অত্যাচার করেন, কুপিয়ে মারেন।’

যেসব বলছেন, এটা বাংলাদেশের গত ৪০ বছরের সংস্কৃতি মন্তব্য করে উপস্থাপক জানতে চান, বাংলাদেশ কেন ইউরোপীয় বা শ্রীলঙ্কাসহ এশিয়ার কোনো দেশ থেকে আলাদা হবে?

জবাবে আনিস আলমগীর বলেন, ‘তাহলে তো ঠিকই আছে। তাহলে ডিম মারা তো ঠিক আছে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে? আমরা তো এই জাতি, আমরা তো এগুলোই করি। আমরা তো বছরের পর বছর নিউ ইয়র্কে এগুলোই দেখে এসেছি। এটা তো নতুন কিছু নয়। সুতরাং মূর্ছা যাওয়ার কিছু নেই। যারা মানুষ মেরে ফেলতেছে কুপিয়ে, সেখানে প্রতিবাদ করতে পারে না, যারা আদালত অঙ্গনে আইনজীবীদের আঘাত করে, যারা আসামি তাদের আঘাত করে, তখন কিছু বলতে পারে না। আর এটা তো খোলা মাঠে হয়েছে এবং একজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। যদিও আওয়ামী লীগ বলছে, তাকে ভিন্ন ইস্যুতে গ্রেপ্তার করেছে। এখন এরা এটা প্রচার করছে। আর আখতার যেটা করেছে, আখতারও কি চুপ ছিল? আখতারও তো তার প্রতিবাদে আলাদা মিটিং করেছে, আওয়ামী লীগকে ইয়ে করেছে। উনি কি জাতিসংঘে গেছেন আওয়ামী লীগকে ইয়ে করার জন্য বা ওই খানে গিয়ে আন্দোলন করার জন্য বা রাজনীতি করার জন্য? তার মানে কী? আমাদের নেতারা যে কোয়ালিটির, আমাদের সমর্থকগুলোও ওই কোয়ালিটির।’

বর্তমানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক সফররত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিনিধিদলে রয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তার ওপর ডিম নিক্ষেপ ও হামলা করে পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনায় যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান নামে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে হাতকড়া পরিয়ে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *