জামায়াতের প্রতি ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতরা বড় ধরনের আগ্রহ দেখাচ্ছেন: জাহেদ

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক জাহেদ উর রহমান বলেছেন, ‘বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিশেষ করে ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতরা জামায়াতের প্রতি বড় ধরনের আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তারা নিয়মিত জামায়াতের সঙ্গে দেখা করছেন। জামায়াতের নতুন লোগো প্রকাশের সময়, বৈঠক বা প্রতিনিধি সফরের মাধ্যমে। কেউ কেউ এটিকে জামায়াত ক্ষমতায় আসার ইঙ্গিত হিসেবে দেখলেও বাস্তবে এটি কেবল রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ।

রাষ্ট্রদূতরা জানতে চাইছেন জামায়াত দেশের রাজনীতিতে কতটা সক্রিয়, ক্ষমতায় এলে তারা কী নীতি বাস্তবায়ন করবে এবং তা সংবিধান ও আইনের ওপর কতটুকু প্রভাব ফেলবে। বিশেষভাবে, নারীর অংশগ্রহণ এবং সামাজিক নীতির পরিবর্তন নিয়ে আন্তর্জাতিক মিশনগুলোর উদ্বেগ রয়েছে। রাষ্ট্রদূতরা এমন বিষয়গুলো যাচাই করতে চাইছেন—যাতে বোঝা যায়, জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতদের সাক্ষাৎকে হাইপ বা রাজনৈতিক সমর্থন হিসেবে দেখা ভুল হবে। এটি মূলত তথ্য সংগ্রহ এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা বোঝার প্রক্রিয়া, যাতে আন্তর্জাতিক কমিউনিটি নিশ্চিত হতে পারে যে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল কিভাবে রাজনীতি করবে এবং তার সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ নীতিতে কী প্রভাব ফেলবে।’

বুধবার (১ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে জাহেদ উর রহমান এসব কথা বলেন।

জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘জামায়াতের এই নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা কি বাড়ছে? বিভিন্ন জায়গায় এ নিয়ে হাইপ তোলা হচ্ছে। জামায়াতের হাতে একটি নতুন রাজনৈতিক সুযোগ এসেছে, যা আগস্টের পর আরো বাড়ছে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিশেষ করে ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতরা, জামায়াতের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করছেন।’

উদাহরণস্বরূপ, নতুন লোগো প্রদর্শনের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং স্পেনের রাষ্ট্রদূত জামায়াতের আমিরের সঙ্গে দেখা করেছেন। যেখানে সেই লোগোটি পুনঃপ্রদর্শন করা হয়েছিল। কেউ কেউ এটিকে এভাবে দেখেন যে বিদেশি মিশনগুলো দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, জামায়াতের অবস্থান এবং পরিকল্পনা বোঝার চেষ্টা করছে এবং কিভাবে সম্পর্ক রক্ষা করা হবে তা যাচাই করছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে, এটা কি জামায়াত নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার ইঙ্গিত দেয়? প্রথমত, এটুকু বলা যায় যে জামায়াতের সঙ্গে যে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা দেখা করেছেন। এটি স্বাভাবিক বলা যায়, কারণ জামায়াত বাংলাদেশের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ বাদ দিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল।’

তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কিছু লোক এখন জামায়াতকে প্রমোট করার চেষ্টা করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, যদি কিছু আওয়ামী লীগের ভোট জামায়াতের দিকে যায়, তাহলে জামায়াত বিএনপিকে হারাতে পারে। তবে আমার মনে হয় না এটি বাস্তবসম্মত। কারণ জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির ভোটের বড় ব্যবধান আছে এবং সিটের ব্যবধান আরো বেশি।’

জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘জামায়াত বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। দীর্ঘদিন ধরে তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতদের সরাসরি ইন্টারেকশন খুব সীমিত ছিল। বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল চলমান কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে ফরমাল যোগাযোগ খুব কম হয়েছে। ফলে জামায়াত সম্পর্কে অনেক তথ্য, বোঝাপড়া এবং মতবিনিময় এখনো যথাযথভাবে ঘটেনি। এই নতুন প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাষ্ট্রদূতদের দেখা এবং আলাপ হওয়াটা স্বাভাবিক এবং অপ্রত্যাশিতও নয়।’

তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় যে হাইপ তৈরি করা হচ্ছে, যেমন জামায়াত ক্ষমতায় চলে আসবে, তা আমি বিশ্বাস করি না। আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, এমন ধারণা মানুষের মধ্যে নেই। রাষ্ট্রদূতরা জামায়াতের সঙ্গে দেখা করতে এবং কথা বলতে চাইছেন কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করার জন্য। জামায়াতও চেষ্টা করছে তাদের আশ্বস্ত করতে।’

তিনি আরো বলেন, ‘জামায়াত এত দিন তাদের নারী সদস্যদের মূলত ঘরে রেখেছে এবং নারীদের দাওয়াত বা অন্যান্য কার্যক্রমে পাঠাতেও সীমাবদ্ধতা ছিল। নারীরা হিজাব বা নিকাব পরেও সাধারণ সামাজিক বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারতেন না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি ইসলাম নারীদের এই ধরনের অংশগ্রহণ অনুমোদন করে তাহলে এত দিন তারা কেন তাদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল? নারীদের বিষয়টি পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতদের মধ্যেও যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ।’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *