পলাতক ৮১ পুলিশ কর্মকর্তাকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের শরণাপন্ন এনসিবি

জুলাই মাসে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ বহু পুলিশ কর্মকর্তা কর্মস্থল ত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যান। পুলিশের আনুষ্ঠানিক তথ্যমতে, এখনও অন্তত ৮১ জন পুলিশ কর্মকর্তা পলাতক রয়েছেন। এদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ইন্টারপোলের সহযোগিতা চেয়ে আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে।

এই তালিকায় কনস্টেবল থেকে শুরু করে ডিআইজি পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা রয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে মাত্র ১৫ জনের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চিহ্নিত কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন অতিরিক্ত আইজিপি (বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত) মনিরুল ইসলাম (Monirul Islam), সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান (Habibur Rahman), ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ (Mohammad Harun-or-Rashid), সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার (Proloy Kumar Jowardar) এবং ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম (Syed Nurul Islam)।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে দেখা গেছে হারুন অর রশীদ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের উডল্যান্ড শহরে অবস্থান করছেন। পুলিশের তথ্যে বলা হয়েছে, তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রেই আছেন, সেখানেই অবস্থান করছেন মনিরুল ইসলামও। অন্যদিকে, সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান আছেন যুক্তরাজ্যে। প্রলয় কুমার জোয়ারদার ও সৈয়দ নুরুল ইসলামের অবস্থান ভারত বলে ধারণা করছে পুলিশ।

পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. বাহারুল আলম জানান, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে সরাসরি জড়িত বহু পুলিশ কর্মকর্তা বিদেশে পালিয়ে গেছেন। দেশে যারা রয়ে গেছেন, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বিদেশে অবস্থানকারীদেরও কয়েকজন শনাক্ত হয়েছে, আর তাদের ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসব কর্মকর্তা দলীয় স্বার্থে কাজ করতেন। বিদেশে পালিয়ে গিয়েও তারা পতিত নেতাদের সহায়তায় দেশের ভেতরে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছেন, যাতে সুযোগ পেলে আবার দেশে ফিরতে পারেন।

অভ্যুত্থানের পর পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মোট ১ হাজার ৪৯০টি মামলা হয়েছে। এ সময় দেশজুড়ে অন্তত ১৩৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা কর্মস্থল ত্যাগ করেন। তাদের মধ্যে ৫৬ জন ইতিমধ্যে ফিরে এলেও এখনও ৮১ জন পলাতক রয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন ৩ জন ডিআইজি, ১০ জন অতিরিক্ত ডিআইজি, ১১ জন পুলিশ সুপার, ৯ জন অতিরিক্ত এসপি, ৫ জন এএসপি, ২৭ জন পরিদর্শক, ৮ জন এসআই, ৩ জন এএসআই এবং ৫ জন কনস্টেবল।

গত ৭ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ৪০ জন ডিআইজি থেকে পরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ সময় তাদের অনুকূলে দেওয়া পদকও প্রত্যাহার করা হয়। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী ‘পলায়ন’ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ইতোমধ্যে বহু কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এছাড়া গত এক বছরে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে পুলিশের বিভিন্ন স্তরের ৮৬ জন কর্মকর্তাকে অন্য ইউনিটে বদলি করা হয়েছে। ৮২ জনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে এবং ৫৫ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, পলাতক কর্মকর্তাদের শনাক্তকরণ ও দেশে ফেরানোর প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে অব্যাহত থাকবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *