ভোটের হালচাল: কিশোরগঞ্জ-২ আসনে মাঠে বিএনপি’র ১০ মনোনয়নপ্রত্যাশী

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ভোটযুদ্ধ। এই প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী–পাকুন্দিয়া) আসন এখন কেন্দ্রবিন্দুতে, যেখানে বিএনপির একাধিক নেতা ইতোমধ্যেই মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

এই আসনে বিএনপির অন্তত ১০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী এখন জোর তৎপরতায় আছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজীব কুমার ঘোষ (Rajib Kumar Ghosh), অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দীন (Advocate Md. Jalal Uddin), আশফাক আহমেদ জুন, রুহুল আমিন আখিল, সুইডেন প্রবাসী শহীদুজ্জামান কাকন, ভিপি কামাল উদ্দিন, আহমদ ফারুক খোকন, খন্দকার আল আশরাফ মামুন, তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ এবং রেজাউল করিম।

অতীতের ইতিহাসে বিএনপির দৃঢ় অবস্থান

কিশোরগঞ্জ-২ আসনটি বহু বছর ধরেই বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কটিয়াদী উপজেলাকে ঘিরে থাকা তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি চারবার জয় পেয়েছিল। ১৯৭৯ সালে আনিসুজ্জামান খোকন, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন এবং ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে হাবিবুর রহমান দয়াল বিজয়ী হন। পরবর্তী সময়ে ২০০১ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ডা. আবদুল মান্নান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এই ধারাবাহিক ইতিহাসে বোঝা যায়, কিশোরগঞ্জ-২ আসনটি রাজনৈতিকভাবে একাধিক দলের দখলে গেলেও বিএনপি এখানে দীর্ঘ সময় নিজেদের ভিত্তি ধরে রেখেছে।

বিএনপিতে মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা

এ আসনে মনোনয়ন পেতে এখন বিএনপির মধ্যে চলছে নীরব প্রতিদ্বন্দ্বিতা। জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দীন বলেন, “হাসিনার আমলে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে গেছি, হামলা-মামলা সহ্য করেছি। আশা করি ত্যাগের মূল্যায়ন করবে দল।”
সহ-সভাপতি রুহুল আমিন আখিলের মন্তব্য, “দলের দুঃসময়ে মাঠে থেকেছি। এবার দল আমাকে অগ্রাধিকার দেবে বলে বিশ্বাস করি।”
অন্যদিকে আহমদ ফারুক খোকন বলেন, “দলীয় প্রধান ঘোষণা দিয়েছেন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। সেই বিবেচনায় আমি নিশ্চিত, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।”

বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের ইঙ্গিত

এবারের নির্বাচনে শুধু বিএনপি নয়, জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য দলও সক্রিয়। জামায়াত ইতোমধ্যে কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা শফিকুল ইসলাম মোড়লকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, “এ আসন থেকে জামায়াত কখনো সংসদ সদস্য হয়নি। এবার জনগণের সমর্থনে আমরা ইতিহাস গড়তে চাই।”
এছাড়া গণঅধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি ও জেলা সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম শফীক বলেছেন, “দেশে দুই দলের পালাবদলের রাজনীতি মানুষকে শুধু হতাশ করেছে। জনগণ এখন বিকল্প নেতৃত্ব খুঁজছে। আমরা গণঅধিকার পরিষদ মাঠে নেমেছি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।”

এ ছাড়া খেলাফত মজলিশের মাওলানা ছাঈদ আহমদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা রশীদ আহমদ জাহাঙ্গীর হোসাইনীও এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। সাবেক সংসদ সদস্য ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে নামতে পারেন বলে জানা গেছে।

ভোটার কাঠামো ও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি

জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭৪, নারী ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮২৫ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৫ জন। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা আগামী ২০ অক্টোবর প্রকাশিত হবে বলে জানা গেছে।

নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক মাঠ গরম হচ্ছে কিশোরগঞ্জ-২ আসনে। একদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতা, অন্যদিকে জামায়াত ও অন্যান্য দলীয় প্রার্থীদের প্রচারণা—সব মিলিয়ে আসনটি হয়ে উঠেছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের অন্যতম আলোচিত প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *