শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করতে জুলাই আন্দোলনের ষড়যন্ত্র—আদালতে জোর বিতর্ক

২০২৪ সালের আলোচিত জুলাই গণআন্দোলনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাচ্যুত পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ও তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে আদালতে ফের উত্তপ্ত তর্ক-বিতর্ক দেখা দিয়েছে। আইনজীবী আমির হোসেন দাবি করেছেন, সেই আন্দোলন ছিল দীর্ঘমেয়াদি এক ‘অবৈধ পরিকল্পনার অংশ’, যার মূল লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর এই দাবিকে এককথায় ‘মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

মঙ্গলবার, শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চলমান মামলার ৫৪তম সাক্ষী হিসেবে হাজির হন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর। এটি ছিল তার জেরার তৃতীয় দিন। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্যগ্রহণ চলেছে। আগামী বুধবার আবারও তাকে জেরা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

জেরাকালে আইনজীবী আমির হোসেন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা কি নেপথ্যে থেকে শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করেননি?” উত্তরে আলমগীর স্পষ্টভাবে বলেন, “এই অভিযোগ সত্য নয়।”

তিনি আরও দাবি করেন, “জুলাই-আগস্ট মাসে দেশে কোনো যুদ্ধ হয়নি, মানবতাবিরোধী অপরাধও ঘটেনি।” তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর তাৎক্ষণিকভাবে বলেন, “এ কথাও সত্য নয়।” এরপর আবার আমির বলেন, “জুলাই আন্দোলন দীর্ঘদিনের অবৈধ পরিকল্পনার অংশ ছিল।” তদন্ত কর্মকর্তার উত্তর, “এটিও অসত্য।”

ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করার বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তদন্ত না করে অভিযোগ উপস্থাপন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আমির হোসেন। তদন্ত কর্মকর্তা এর জবাবে বলেন, এমন কোনো মনগড়া তথ্য তিনি দেননি।

পুলিশ হত্যার প্রসঙ্গ তুলে আমির প্রশ্ন করেন, “আন্দোলনের সময় সিরাজগঞ্জ, আশুলিয়া ও যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনা তদন্ত করেছেন কি?” জবাবে আলমগীর বলেন, “এগুলো আমার তদন্তের আওতাভুক্ত নয়।”

এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল সদস্যরা জানতে চান, আসামিপক্ষ এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোনো মামলা করেছেন কি না। আইনজীবী জানান, তিনি নিজে কোনো মামলা করেননি। তখন আদালত পরামর্শ দেন, “তাহলে এ বিষয়ে মামলা করুন।”

আশুলিয়ায় লাশ ঢেকে দেওয়ার কথা জানালেন কনস্টেবল

একইদিনে, বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনাল-২-এ আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর মামলায় কনস্টেবল রাশেদুল ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। তিনি জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, কোনো ডিউটি না থাকলেও বিকেল ৪টার দিকে গুলির শব্দ শুনে থানা ভবনের নিচে নামেন। সেখানে তিনি একটি ভ্যানে লাশের স্তূপ দেখতে পান।

তৎকালীন আশুলিয়া থানার ওসি সায়েদ তাকে নির্দেশ দেন, ‘রাশেদ, আপনার হাত খালি আছে, লাশগুলো ঢেকে দেন।’ তিনি পাশে থাকা নীল ব্যানার দিয়ে লাশগুলো ঢেকে দেন। ওসির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুর রহমান, পরিদর্শক (অপারেশন) নির্মল কুমার দাস, এএসআই বিশ্বজিৎ, কনস্টেবল মুকুল চোকদার ও ডিবি ইন্সপেক্টর আরাফাত।

রাশেদুল বলেন, “পরে পাশের একটি ভবনের লোকজনের কাছ থেকে পাঞ্জাবি ও টুপি নিয়ে জামগড়া রূপায়ণে এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নিই। পরে শুনি, আশুলিয়া থানার ভ্যানভর্তি লাশগুলো পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।”

এই সাক্ষ্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে তখনকার প্রশাসনের ভূমিকাকে ঘিরে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *