প্রতীক হিসেবে শাপলা ব্যবহারের দাবিতে অনড় অবস্থান নিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (NCP)। দলটি শুধু শাপলা প্রতীক চেয়ে থেমে থাকেনি, বরং নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় প্রতীক অন্তর্ভুক্তির জন্য নীতিমালা প্রণয়নেরও দাবি জানিয়েছে।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদের কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদন জমা দেন।
তবে কেন এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দেওয়া সম্ভব নয়, তা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলটির সাবেক নেত্রী নীলা ইসরাফিল (Neela Israt Farid)। তিনি নিজের ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “সম্প্রতি এনসিপির নাহিদ ইসলাম প্রশ্ন তুলেছেন—‘শাপলা প্রতীক কেন তাদের দেওয়া যাবে না?’ আমি মনে করি, প্রশ্ন করার অধিকার তার যেমন আছে, তেমনি আইনি ব্যাখ্যা পরিষ্কার করে বলা আমাদেরও দায়িত্ব। যদিও আমি আইনের ছাত্রী নই, তবু যতটা বুঝি, সেই জায়গা থেকেই বলছি—‘শাপলা’ শুধু একটা ফুল নয়, এটি বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক।”
তিনি উল্লেখ করেন, সংবিধানের দ্বিতীয় তফসিলে (Second Schedule) জাতীয় প্রতীকের বর্ণনা রয়েছে—যেখানে শাপলা ফুলকে কেন্দ্র করে ধান, পাট ও জ্যোতির্ময় সূর্য ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ, “শাপলা জাতীয় প্রতীকের কেন্দ্রবিন্দু।”
নীলা ইসরাফিল বলেন, Election Symbols (Allocation and Registration) Order, 1972 অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের স্পষ্ট কর্তৃত্ব আছে প্রতীক নির্ধারণ ও অনুমোদনের বিষয়ে। সেই আইনেই বলা হয়েছে, কোনো প্রতীক যদি জাতীয় প্রতীক, ধর্মীয় চিহ্ন বা রাষ্ট্রীয় মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে সেটি কোনো রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। এতে জাতীয় প্রতীকের অপব্যবহারের ঝুঁকি থাকে।
তার মতে, “এই আইনি সীমারেখা মানেই হচ্ছে ‘শাপলা’ প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না, কারণ এটি রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের অংশ।”
‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে তুলনামূলক ব্যাখ্যায় নীলা বলেন, “অনেকে যুক্তি দেন, ধানের শীষও জাতীয় উপাদান। কিন্তু এটি কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতীক নয়। এটি বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক সমাজের একটি সাংস্কৃতিক প্রতীক মাত্র। বিপরীতে ‘শাপলা’ জাতীয় প্রতীকের অংশ—এটাই পার্থক্য।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “একটি দল কি চায় রাষ্ট্রীয় প্রতীককে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে রাষ্ট্রের নিরপেক্ষতার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে? শাপলা মানে বাংলাদেশ, কিন্তু বাংলাদেশ কারো দলের নয়।”
নীলা আরও লেখেন, “আমি বিশ্বাস করি, যারা সত্যিকারের রাজনীতি করেন, তারা জানেন প্রতীক মানে শুধু ভোট নয়, এটি বিশ্বাসের চিহ্ন। আর ‘শাপলা’র বিশ্বাসটা সবার, কোনো দলের নয়। তাই আইন যেমন অনুমোদন দেয় না, নৈতিকতাও বলে—এই প্রতীক কাউকে দেওয়া উচিত নয়। শাপলা রাষ্ট্রের প্রতীক, দলীয় নয়।”
পোস্টের শেষে তিনি আরও যোগ করেন, “আইন, সংবিধান আর রাষ্ট্রের মর্যাদা—সবই একই কথা বলছে। আমরা যদি রাষ্ট্রের প্রতীককে দলীয় স্বার্থে ভাগ করি, তাহলে রাজনীতির মানে হারিয়ে যাবে। গণতন্ত্র মানে রাষ্ট্রকে দলীয় নয়, রাষ্ট্র হিসেবেই দেখা।”