দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামোর খসড়া চূড়ান্ত করেছে জাতীয় বেতন কমিশন (National Pay Commission)। সর্বশেষ ২০১৫ সালে সর্বজনীন বেতন কাঠামো কার্যকর হওয়ার পর এবার আবারো বড়সড় পরিবর্তনের পথে হাঁটছে সরকার। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, চলমান মুদ্রাস্ফীতি ও ব্যয়বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন গড়ে ৯০ থেকে ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সোমবার, ২০ অক্টোবর কমিশনের এক বিশেষ সভায় এই খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়। সভায় বিস্তারিত আলোচনার পর নতুন কাঠামোতে গ্রেডভিত্তিক মূল বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে।
সর্বোচ্চ বেতন
প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী, গ্রেড-১ এ কর্মরত কর্মকর্তাদের জন্য মূল বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৯৪ টাকা। যা পূর্বের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। গ্রেড-২ তে ১ লাখ ২৭ হাজার ৪২৬ টাকা, গ্রেড-৩ তে ১ লাখ ৯ হাজার ৮৪ টাকা, গ্রেড-৪ এ ৯৬ হাজার ৫৩৪ টাকা এবং গ্রেড-৫ এ ৮৩ হাজার ২০ টাকা মূল বেতন নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।
মধ্যম গ্রেড
মধ্যবর্তী গ্রেডের বেতন কাঠামো অনুযায়ী, গ্রেড-৬ এ ৬৮ হাজার ৫৩৯ টাকা, গ্রেড-৭ এ ৫৫ হাজার ৯৯০ টাকা, গ্রেড-৮ এ ৪৪ হাজার ৪০৬ টাকা, গ্রেড-৯ এ ৪২ হাজার ৪৭৫ টাকা এবং গ্রেড-১০ এ ৩০ হাজার ৮৯১ টাকা মূল বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে।
নিম্ন গ্রেড
নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে। যেমন,
– গ্রেড-১১: ২৪ হাজার ১৩৪ টাকা
– গ্রেড-১২: ২১ হাজার ৮১৭ টাকা
– গ্রেড-১৩: ২১ হাজার ২৩৮ টাকা
– গ্রেড-১৪: ১৯ হাজার ৬৯৩ টাকা
– গ্রেড-১৫: ১৮ হাজার ৭২৮ টাকা
– গ্রেড-১৬: ১৭ হাজার ৯৫৫ টাকা
– গ্রেড-১৭: ১৭ হাজার ৩৭৬ টাকা
– গ্রেড-১৮: ১৬ হাজার ৯৯০ টাকা
– গ্রেড-১৯: ১৬ হাজার ৪৪১ টাকা
– গ্রেড-২০: ১৫ হাজার ৯২৮ টাকা
মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় বেতন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা
দেশে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে এই নতুন বেতন কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত হয়ে আসছিল। চলতি বছরের ২৭ জুলাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করে। কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল, কর্মচারীদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং বেতন কাঠামোকে বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা।
ডিসেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন
কমিশন জানিয়েছে, তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে চায়। লক্ষ্য হলো, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই (ডিসেম্বরের মধ্যে) নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ভিত্তি তৈরি করা।
কমিশন ২০৩০ সাল পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক প্রবণতা বিবেচনায় রেখে ভবিষ্যতের বেতন বৃদ্ধির দিকনির্দেশনাও প্রস্তাব করেছে, যাতে ভবিষ্যতে কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা বজায় থাকে।