মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলায় হেফাজতে থাকা সাবেক ও বর্তমান ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আজ বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (International Crimes Tribunal)-এ হাজির করা হয়েছে। সকাল সোয়া ৭টার দিকে বাংলাদেশ জেল প্রিজনের ভ্যানে করে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাঁদের পুরাতন হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।
আদালত চত্বরে সকাল থেকেই চোখে পড়ে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ ও আশপাশে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও এপিবিএনের বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিল। এ ছাড়া রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর ও কাকরাইল মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যদের সতর্ক অবস্থান ও টহল জোরদার করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই তিন মামলার মধ্যে দুটি অভিযোগ উঠেছে বিগত আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায়। অন্যটি জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের সঙ্গে সম্পর্কিত। তিন মামলায় মোট ৩২ জন আসামি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৫ জনই সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা।
বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছেন ১৫ জন কর্মকর্তা। গুম-নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার একটিতে আসামির সংখ্যা ১৭। এ মামলার অন্যতম আসামি র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন এবং কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (বর্তমানে অবসরকালীন ছুটিতে)।
এছাড়া র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেমও বর্তমানে সেনা হেফাজতে রয়েছেন।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন র্যাবের সাবেক তিন মহাপরিচালক—বেনজীর আহমেদ (পরে আইজিপি হন), এম খুরশিদ হোসেন ও মো. হারুন-অর-রশিদ—যাঁরা বর্তমানে পলাতক। একই মামলায় আরও পলাতক হিসেবে নাম রয়েছে শেখ হাসিনা, সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলামের।
এদিকে জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম এবং সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমানকে।
তাঁদের মধ্যে রেদোয়ানুল ও রাফাত বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছেন, আর বাকি দুজন পলাতক বলে জানা গেছে।