সাতক্ষীরায় জামায়াত নেতাদের নেতৃত্বে সাংবাদিকদের ওপর দফায় দফায় হামলা

সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় রাস্তা সংস্কারকে কেন্দ্র করে পরপর দুই দফায় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পৃথক দুটি স্থানে সংঘটিত এই হামলায় এক সাংবাদিকের মা গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

আহত রমেছা বেগম তালা উপজেলার রহিমাবাদ গ্রামের আবতার মোড়লের স্ত্রী। তিনি এখন তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহতের ছেলে ও স্থানীয় এক পত্রিকার সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান রাজু জানান, গ্রামের রাস্তা সংস্কার নিয়ে শুক্রবার দুপুরে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় সাত্তার মোড়ল ও আনিছ মোড়ল সংস্কার কাজে আপত্তি তোলেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে জামায়াতের কর্মী-সমর্থকরা দলবল নিয়ে রাজুর পরিবারের ওপর হামলা চালায়। এতে রাজুর মা রমেছা বেগম মারাত্মকভাবে আহত হন।

রাজু বলেন, “আমার মা এখন হাসপাতালে ভর্তি। হামলাকারীরা সবাই জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami)-এর কর্মী ও সমর্থক।”

অপরদিকে, ওই ঘটনার খবর সংগ্রহ ও আহত রমেছা বেগমকে দেখতে সন্ধ্যায় তালা হাসপাতালে যান আরেক সাংবাদিক খাঁন নাজমুল ইসলাম। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর ওপরও হামলা চালানো হয়। সাংবাদিক নাজমুল ইসলাম জানান, তিনি যখন তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের সামনে পৌঁছান, তখন তালা সদর ইউনিয়ন জামায়াতের টিম সদস্য ও চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট মশিয়ার রহমান (Advocate Moshiar Rahman) এবং উপজেলা যুব জামায়াতের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান রেন্টু (Mostafizur Rahman Rentu)-এর নেতৃত্বে ২০–৩০ জন কর্মী-সমর্থক তাঁকে ঘিরে ফেলে এবং মারধর করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যুব জামায়াত নেতা রেন্টুর বিরুদ্ধে আগেও জমিজমা মীমাংসার নামে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ উঠেছিল।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে যুব জামায়াত সভাপতি রেন্টু বলেন, “আমরা কেবল পারিবারিক বিরোধ মীমাংসার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। সামান্য তর্কবিতর্কের সময় হাতাহাতি হয়েছে, কিন্তু মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।”

এ বিষয়ে জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট মশিয়ার রহমান বলেন, “আমি নাজমুলকে শুধু বলেছিলাম—এটা পারিবারিক বিষয়, ভিডিও করা বা সংবাদ প্রকাশের দরকার নেই। তখন সামান্য ধস্তাধস্তি হয়, এর বেশি কিছু নয়।”

ঘটনার বিষয়ে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাঈনুদ্দীন (Md. Mainuddin) বলেন, “দুপুরে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল, আর সন্ধ্যায় তার জের ধরে আবার মারপিট হয়। সাংবাদিককে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে, আর স্থানীয় সাংবাদিক মহলে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি উঠেছে সামাজিক ও পেশাগত মহলে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *