গণতন্ত্র আবারও চক্রান্তের শিকার হতে চলেছে—এমন অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir)। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (Ziaur Rahman)-এর মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের পর আজ বাংলাদেশে আবারও গণতন্ত্র ধ্বংসে নানা রকম চক্রান্ত চলছে। এমন সময়ে ৭ নভেম্বর আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই পথের কথা, যে পথে হাঁটলে আমরা বাংলাদেশকে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারব। যেখানে জনগণের ভোটাধিকার ও ন্যায়বিচারের অধিকার নিশ্চিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, বিএনপি সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও সেই পথে এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই চলবে বলেও জানান দলটির মহাসচিব।
জামায়াতের প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্নে কৌশলী উত্তর
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের গণভোট সংক্রান্ত প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল সংক্ষেপে বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের দলের অবস্থান স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গতকাল স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে। সেটাই আমাদের বক্তব্য।”
৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরেন ফখরুল
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের পটভূমি টেনে তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশের দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং জনসাধারণ আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রকে রুখে দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেন। এটি ছিল দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক মোড় ঘোরানো মুহূর্ত।”
বিএনপি মহাসচিবের ভাষায়, “জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। তিনি সংবাদমাধ্যম ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন এবং জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। রাষ্ট্রের রাজনীতি, অর্থনীতি—সবক্ষেত্রেই তিনি আমূল পরিবর্তন আনেন এবং একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় ব্যবস্থায় ফেরত নিয়ে আসেন।”
তিনি আরও বলেন, “মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে দেন। তাঁর হাত ধরেই সুখী, সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি স্থাপিত হয়, যা আজও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় প্রভাব ফেলছে।”
জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নেতাদের উপস্থিতি
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহ উদ্দিন আহমদ, এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ নেতারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদসহ মহানগর উত্তর নেতা আমিনুল হক, দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু ও তানভীর আহমেদ রবিনসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শ্রদ্ধা নিবেদন ও র্যালির প্রস্তুতি
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর পর্যায়ক্রমে মহানগর বিএনপি, মুক্তিযোদ্ধা দল, মহিলা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ড্যাব, এ্যাব, ছাত্রদল, তাঁতীদল ও মৎস্যজীবী দলসহ নানা সংগঠনের নেতাকর্মীরা জিয়াউর রহমানের কবরস্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে র্যালি আয়োজনের পরিকল্পনার কথাও জানানো হয়। রাজধানীতে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিকাল ৩টায় র্যালি শুরু হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই র্যালি কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, বাংলা মোটর হয়ে সোনারগাঁও হোটেল মোড়ে গিয়ে শেষ হবে।


