ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। ভোট আয়োজনের প্রতিটি ধাপ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ (Abdur Rahmanel Mahsud)। তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন হলেও আমরা শতভাগ প্রস্তুত।”
ভোটের কালি পৌঁছেছে, প্রস্তুতির মূল কাজ সম্পন্ন
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ভোটের কালি ইতোমধ্যেই দেশে এসে পৌঁছেছে, যা নির্বাচনের প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তিনি জানান, ভোটের আগে প্রয়োজনীয় প্রায় সব মৌলিক কাজই শেষ করে ফেলেছে নির্বাচন কমিশন।
আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি
দেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে কমিশনার বলেন, “শুধু নির্বাচন নয়, দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্যই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ জরুরি।” রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী ঘোষণা করার পর থেকেই দেশে ভোটের আমেজ শুরু হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
“আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে নামলে পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে। এবারের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি নির্বাচিত সরকার ও গণতান্ত্রিক ধারার ধারাবাহিকতা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়,”—বলেন তিনি।
ভোটার আস্থা ফিরিয়ে আনা বড় চ্যালেঞ্জ
আব্দুর রহমানেল মাছউদ স্বীকার করেন, গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম ও অভিযোগের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, সেটি কাটিয়ে তোলাই বর্তমান কমিশনের প্রধান লক্ষ্য।
তিনি বলেন, “ভালো নির্বাচন ছাড়া আমাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে। এবারের ভোটকে আমরা জনগণের জন্য একটি উৎসবে পরিণত করতে চাই।”
নির্বাচনী প্রস্তুতির সময়সূচি চূড়ান্ত
ইসি সচিবালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্বাচনী সামগ্রী সংগ্রহ, আইন সংশোধন, ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ সব প্রস্তুতি নভেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। ডিসেম্বরের শুরুতেই তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।
এ বছর দেশে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৩৮৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার ৩৮২ জন, নারী ভোটার ৬ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার রয়েছেন ১ হাজার ২৩০ জন। শুধু গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দুই মাসে নতুন ভোটার বেড়েছে ১৩ লাখ ৪ হাজার ৮৮০ জন।
আখতার আহমেদ (Akhtar Ahmed), ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব জানিয়েছেন, আগামী ১৮ নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এর আগে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত থাকবে দাবি-আপত্তি জানানোর সুযোগ।
ভোট কেন্দ্র ও পোস্টাল ভোটিং নিয়ে নতুন উদ্যোগ
ইসি এবার ৬৪ জেলায় ৩০০টি আসনের জন্য মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করেছে। পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭টি এবং নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২টি ভোটকক্ষসহ মোট ভোটকক্ষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি।
প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পোস্টাল ভোটিংয়ের সুযোগ রাখার কথাও নিশ্চিত করেছে ইসি। এতে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে।


