জুলাই-আগস্টের প্রাণহানির দায় স্বীকার করলেন শেখ হাসিনা: দাবি আনন্দবাজারের

গত বছরের বিতর্কিত আন্দোলনপর্বে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায় স্বীকার করেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)—এমনই দাবি করেছে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার (Anandabazar)। ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বও দায়ী’, এই শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যেসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল, তার দায় থেকে আর নিজেকে সরিয়ে রাখেননি হাসিনা। বরং, এবার তিনি সেই রাজনৈতিক দায়ের অংশবিশেষ নিজ কাঁধে নিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গণবিক্ষোভের জেরে ক্ষমতা হারানোর ১৫ মাস পর প্রথম বার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দায় এড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ বার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বহু মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় কার্যত দোষ স্বীকার করলেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকা ছেড়ে দিল্লিতে চলে যান হাসিনা। সেই থেকে ভারতেই ‘অজ্ঞাতবাসে’ রয়েছেন তিনি। সেখান থেকেই চলতি সপ্তাহের ইমেলে তিন সংবাদমাধ্যম- রয়টার্স, এএফপি এবং দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে প্রথম সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে গত বছরের জুলাই-অগস্টের আন্দোলনপর্বে বিপুল প্রাণহানির দায় চাপিয়েছিলেন পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাঁধে। নাম না করে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন ‘বিদেশি চক্রান্ত’ এবং আন্দোলনকারীদের একাংশের দিকেও।

কিন্তু বৃহস্পতিবার সুর বদলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দোষের কথাও কবুল করেছেন হাসিনা। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, আপনি কি রাষ্ট্র কর্তৃক সংঘটিত হিংসার জন্য দায় স্বীকার করেন? জবাবে তিনি বলেন, দেশের নেত্রী হিসেবে, আমি চূড়ান্ত ভাবে নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করি। হত্যাকাণ্ডের জন্য আইনরক্ষক বাহিনীকে নিশানা করে তিনি বলেন, আমি নিরাপত্তা বাহিনীকে পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিলাম, এই অভিযোগ মৌলিক ভাবে ভুল। প্রাণহানি বা আইনশৃঙ্খলার আরও অবনতির উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিত ভাবে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।

প্রবাস থেকে ‘দায়িত্বের স্বীকৃতি’

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা ত্যাগ করে তিনি দিল্লিতে চলে যান এবং সেখান থেকেই ‘অজ্ঞাতবাসে’ অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই দেওয়া সাক্ষাৎকারে, প্রথমে তিনি পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর দায় চাপিয়ে বলেছিলেন, “নিরাপত্তা বাহিনীকে পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিলাম, এই অভিযোগ মৌলিকভাবে ভুল।”

তিনি আরও বলেন, “আমি দেশের নেত্রী হিসেবে নেতৃত্বের পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করি। প্রাণহানি বা আইনশৃঙ্খলার অবনতির উদ্দেশ্যেই এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে চালানো হয়েছিল।” যদিও আগের বক্তব্যে তিনি ‘বিদেশি চক্রান্ত’ এবং ‘আন্দোলনকারীদের একাংশ’-এর দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন, এবার তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার দিকেও আঙুল তুলেছেন বলে দাবি আনন্দবাজারের।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও প্রাণহানির চিত্র

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে বাংলাদেশের সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অন্তত ১,৪০০ জন নিহত হন, আহত হন কয়েক হাজার মানুষ। এ সময় জোরালো দমননীতির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।

এই প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যকে রাজনৈতিক দায় স্বীকারের দিকেই টেনে নিয়েছে আনন্দবাজার। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আগের বক্তব্যের তুলনায় এবার তার কণ্ঠে দায় এড়ানোর প্রবণতা অনেকটাই অনুপস্থিত ছিল।

শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতেই অবস্থান করছেন এবং দেশে ফেরার কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো পাওয়া যায়নি। তবে তার এই স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে বলেই বিশ্লেষকদের অভিমত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *