“বাংলাদেশে এখন নির্বাচন করতে হলে ১০ থেকে ২০ কোটি টাকা লাগে”— এমন বাস্তবতা তুলে ধরে নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া (Asif Mahmud Sajib Bhuiyan)। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, “আমাদেরও বারবার চিন্তা করতে হয়—নির্বাচনে অংশ নেব কি নেব না। এই কাঠামোতে নির্বাচনে যাওয়া আদৌ কতটা বাস্তবসম্মত?” তিনি জানান, প্রার্থীদের এত টাকা না থাকলে তাদের নির্বাচন করা অর্থহীন হয়ে পড়ে—“নমিনেশন কিনে দাঁড়াতে পারবেন, কিন্তু জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।”
“রাজনীতিতে ঢুকলেই টাকার খেলা, কালো টাকার দৌরাত্ম্য”
আলোচনায় তিনি বলেন, “যাদের কাছে কালো টাকা আছে, মূলত তারাই আজকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। আর যদি আপনি কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভোটে দাঁড়ান, তাহলে আপনাকে পরে তাদের স্বার্থ বাস্তবায়ন করতেই হবে।”
তিনি প্রশ্ন তুলেন, “মানুষ কি টাকা ছাড়া এখন আর ভোট দেয়? এই কাঠামোতে আদৌ কি গঠনমূলক ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্ভব?” তিনি আরও বলেন, “একজন ব্যবসায়ী যদি আপনাকে টাকা দেয় নির্বাচনে জেতার জন্য, তাহলে পরে আপনাকে তার হয়ে কাজ করতে হবে।”
“সংস্কারের কথা বলেও আজ অনেকে পিছিয়ে গেছেন”
আসিফ মাহমুদ বলেন, “আমরা দেখেছি—যারা এক সময় সংস্কারের কথা সবচেয়ে বেশি বলতেন, ৫ আগস্টের পর তারা কেন জানি সংস্কারবিরোধী রাজনীতিতে ঢুকে গেছেন।” তিনি প্রশ্ন করেন, “এই সংস্কারবিরোধী রাজনীতি আদৌ তাদের জন্য কী বয়ে আনছে? দেশের জন্য তো ক্ষতিকরই, কিন্তু তাদের নিজেদের সফলতা কোথায়?”
“গণ-অভ্যুত্থানের পর আমাদের সামনে তিনটি বিষয় ছিল”
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর সংস্কার, বিচার এবং গণতান্ত্রিক রূপান্তর—এই তিনটি দিককে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল বলেও উল্লেখ করেন আসিফ মাহমুদ। বিচারিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি যতটুকু জানি, বিচার হচ্ছে এবং আগামী ১৩ নভেম্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় হওয়ার কথা রয়েছে। অথচ সেই প্রেক্ষিতে আবার ফ্যাসিবাদী শক্তি ঢাকায় লকডাউনের ডাক দিয়েছে।”
গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সংসদে ৩০০ জন যাবে—প্রশ্ন হলো, এর মধ্যে ক’জনের হাতে ২০ কোটি টাকা আছে? এই বাস্তবতায় আসলেই জনগণের প্রতিনিধিত্ব সম্ভব কি না, তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে।”
“জোহরান মামদানি এক্সেপশন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা সম্ভব না”
নির্বাচনী ব্যতিক্রম হিসেবে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ জোহরান মামদানির উদাহরণ টানলেও, আসিফ মাহমুদের মতে, এটি বাংলাদেশের জন্য বাস্তব নয়। তিনি বলেন, “একটা-দুটো ব্যতিক্রম হতে পারে, হয়তো এই নির্বাচনেও ঘটবে। কিন্তু ৩০০ আসনে এই ধরনের ব্যতিক্রম দিয়ে আপনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন না, সরকার গঠন তো দূরের কথা।”
গোলটেবিলে ছিলেন বিশিষ্টজনেরা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম (Abdul Latif Masum), কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, পুসাবের সদস্য ফাহমিদুর রহমান এবং অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট মোহাম্মদ সজল।
আলোচনায় রাজনীতি, নির্বাচনী সংস্কার ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ ঘিরে নানা প্রশ্ন ও উদ্বেগ উঠে আসে। মূল বক্তব্যে উঠে আসে—অর্থ ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন কোনো জায়গা নেই।


