কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বরং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যদি আহ্বান জানান—তাহলেই আলোচনায় বসতে আগ্রহী থাকবে বিএনপি (BNP)। শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ছাত্রদলের এক আলোচনা সভায় এ কথা জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ (Salahuddin Ahmed)।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যদি কোনো বিষয়ে আমাদের আহ্বান জানান আলোচনার জন্য, যেকোনো ইস্যুতেই আমরা সবসময় প্রস্তুত। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দল হয়ে কেন আমাদের আলোচনায় আহ্বান জানানো হচ্ছে? এটি গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা রাজনৈতিক যোগাযোগ সব দলের সঙ্গেই রাখি। সেটা এনসিপি হোক, জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) হোক—গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে আমরা সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সম্পর্ক রাখব। কিন্তু কোনো দল যদি রেফারির ভূমিকায় আসে, সেটা সঠিক হবে না।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কড়া সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, “আপনারা কোনো নির্বাচিত সরকার নন—এটা মনে রাখা জরুরি। আপনাদের এমন কোনো ক্ষমতা নেই যে, আমাদের ডিক্টেট করবেন—‘সাত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিন, না হলে আমরা নেবো।’ এত শক্তি প্রদর্শন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যায় না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই আপনারা গণতান্ত্রিকভাবে নিরপেক্ষ থেকে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন আয়োজন করুন। সে সীমার মধ্যে আমরা আপনাদের সমর্থন করব। কিন্তু যদি ভাবেন, অন্য কোনো রাজনৈতিক দল দিয়ে আমাদের আলোচনায় আহ্বান জানাবেন—তাহলে প্রশ্ন ওঠে, তারা কারা?”
সালাহউদ্দিন আহমদ সরকারের প্রতিও বার্তা দেন, “আমরা ভেবেছিলাম জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করবে, আর অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা নিজেরাই রেফারি হয়ে গোল দিয়ে দিয়েছে! এখন বলা হচ্ছে, সাত দিনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—না হলে তারা নেবে। এটা তো সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক মনোভাব।”
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, “৭ নভেম্বর বাংলাদেশের মানুষ শিখেছিল, দেশের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হয়। সিপাহী-জনতা, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্রিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে—এটাই ছিল ৭ নভেম্বরের শিক্ষা।”
আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, “আওয়ামী লীগ (Awami League)-এর জন্মলগ্ন থেকে তাদের চিন্তায় গণতন্ত্রের কোনো বীজ নেই। শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই তা প্রমাণ করেছেন, আর তার কন্যা সেটিকে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে—যেখানে গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার পরিবর্তনের পথ বন্ধ থাকে, সেখানে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। পৃথিবীর বহু দেশেই এমন নজির দেখা যায়।”
জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আপনারা যাঁরা ১৯৭১ সালে উল্টা দিকে যাত্রা করেছিলেন, ১৯৪৭ সালে বিপরীত দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন, জাতীয় পার্টির হাত ধরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাহেবের সহচর হয়েছিলেন, আপনারা আবার যদি আওয়ামী লীগের হাত ধরে পুনরুত্থান চান, কী পরিণতি হবে, আল্লাহ মালুম! আপনারা যা শুরু করেছেন, তাতে করে উৎসাহিত হবে পতিত ফ্যাসিস্ট। তাতে উৎসাহিত হবে বাংলাদেশে অন্য যেকোনো রকমের অগণতান্ত্রিক শক্তি।


