রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) (Border Guard Bangladesh) মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ঢাকা মহানগর এলাকায় বিজিবির ১২টি প্লাটুন এবং নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় আগে থেকেই মোতায়েন রয়েছে আরও দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্য। এদের মূল দায়িত্ব হলো সহিংসতা প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা রক্ষা।
বিজিবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে পাঠানো কিছু ছবিতে রাজধানীর শাহবাগের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি এবং আশপাশের এলাকায় বিজিবি সদস্যদের অবস্থান দৃশ্যমান।
আগামী বৃহস্পতিবার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা-র বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ ১৩ নভেম্বর ‘লকডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে চলমান পরিস্থিতিতে বিএনপি (BNP), জামায়াতে ইসলামি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizen Party – NCP)সহ রাজনৈতিক দলগুলোকে মাঠে থাকার আহ্বান জানানো হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাবেন। সন্ত্রাসীরা যাতে সহজে জামিন না পায়, সেই বিষয়ে আমরা বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।”
তিনি আরও বলেন, “গত দুই দিন ধরে বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। যারা এসব করছে তারা সন্ত্রাসী। শুধু বাহিনীর নয়, সকলের দায়িত্ব তাদের প্রতিহত করা।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা জানান, সম্প্রতি প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায়ীদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে যাতে কোনো সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য বিজিবিকে সতর্ক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও জোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। যেমন—আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, মেট্রোরেল, রেলওয়ে ও অন্যান্য কেপিআই (Key Point Installation)-ভুক্ত এলাকাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সড়কপথে বাসে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা ঠেকাতে কিছু জ্বালানির পাম্প সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-সহ দেশের সব বিমানবন্দরে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা সতর্কতা। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)-এর নির্দেশে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই সতর্কতা কার্যকর করা হয়।
বেবিচকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) কাউছার মাহমুদ জানান, “বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি।” হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এস এম রাগিব সামাদ বলেন, “বেবিচক আমাদের বাড়তি সতর্কতা নিতে বলেছে এবং আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
ঢাকার রাজপথে সহিংসতা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এমন যৌথ উদ্যোগ নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল রাখতে কতটা সফল হয়—তা সময়ই বলবে।


