মানবতাবিরোধী অভিযোগ অস্বীকার করলেন শেখ হাসিনা, বিবিসিকে ইমেইলে পাঠিয়েছে সাক্ষাৎকার

২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে—এমন অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)। আগামী ১৭ নভেম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে যে মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে, তার ঠিক আগে বিবিসিকে দেওয়া এক ইমেইল সাক্ষাৎকারে তিনি এই দাবি জানান।

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা হারানোর পর পাঁচই আগস্ট দেশ ত্যাগ করেন হাসিনা। দেশ ছাড়ার পর এটাই ছিল তার প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বক্তব্য। সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, তার অনুপস্থিতিতে যে বিচার চলছে, তা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নিয়ন্ত্রিত “ক্যাঙ্গারু কোর্টের” সাজানো এক “প্রহসন”, যার উদ্দেশ্য কেবলই তাকে শাস্তির মুখোমুখি দাঁড় করানো।

হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর কেন্দ্রবিন্দু—তার স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে হওয়া বিক্ষোভে শতাধিক মানুষ নিহত হয়, আর এই হত্যাকাণ্ডগুলোর মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে তিনি এই অভিযোগ ‘মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে প্রত্যাখ্যান করে জানান, এই বিচার শুরু থেকেই “পূর্বনির্ধারিত দোষী সাব্যস্ত রায়ের দিকেই এগোচ্ছিল”।

এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার দোষী সাব্যস্ত হলে তার জন্য মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। রায়ের দিন ঘনিয়ে আসতেই রাজধানী ঢাকার ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। রায়কে ঘিরে উদ্বেগ ও প্রত্যাশা—দুটি অনুভূতিই সমানভাবে প্রবল হয়ে উঠছে।

এই রায় বাংলাদেশের জন্য যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মুহূর্ত, তেমনি এটি সেই সব পরিবারের জন্যও এক আবেগময় সময়, যাদের প্রিয়জনরা হাসিনাবিরোধী ছাত্রনেতৃত্বের আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন।

এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় পরিকল্পিত ও প্রাণঘাতী সহিংসতায় হাসিনা ও তার সরকারের পদক্ষেপে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। তাদের এই মূল্যায়নও চলমান মামলাকে ঘিরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *