ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘নিয়ম-কানুন মেনে’ ভোটে অংশ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএনপি (BNP)। একই সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল নিয়োগের আহ্বান জানিয়ে দলটি বলেছে, এতে দেশে রাজনীতির ধারায় ‘গুণগত পরিবর্তন’ আসবে।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চতুর্থ দিনের সংলাপে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
সংলাপে তিনি বলেন, “এই মতবিনিময় নতুন কিছু নয়। অতীতে সফল না ব্যর্থ—সে মূল্যায়ন এখন জরুরি নয়। তবে সংলাপের এই প্রক্রিয়াকে আমরা স্বাগত জানাই।”
আচরণবিধি মেনে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে দলটির অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেন, “প্রার্থীদের একটাই করণীয়—নিয়মনীতি মেনে নির্বাচন করা। আমরা সেটাই করব। এ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তপশিলের বাইরে যাওয়ার সুযোগও দেখি না।”
তবে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শাস্তির যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় নিয়ম মানার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। “যত নিয়ম-কানুনই তৈরি করা হোক না কেন, শাস্তির ব্যবস্থা না থাকলে তা কাজে আসে না। বরং নিয়ম যত বেশি, লঙ্ঘনের প্রবণতাও তত বাড়ে,” বলেন তিনি।
আচরণবিধিকে সরলীকরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে মঈন খান বলেন, “এই প্রক্রিয়াকে যতটা সম্ভব সহজ করতে হবে। শাস্তির বিধান স্পষ্ট না থাকলে কোনো অঙ্গীকারই বাস্তবায়ন হয় না।”
বর্তমান প্রেক্ষাপটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) অপব্যবহার এবং মিথ্যা তথ্য (misinformation) ছড়ানো নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। বলেন, “বাকস্বাধীনতার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু সেই স্বাধীনতার অপব্যবহারও হবে—এটা নিশ্চিত। আমরা দায়িত্বশীল আচরণ করব, একই দায়িত্বশীলতা কমিশন এবং অন্যান্য প্রার্থীদের কাছ থেকেও প্রত্যাশা করি।”
দেশের রাজনীতির চলমান প্রেক্ষাপটকে ‘একটি ক্রান্তিকাল’ আখ্যা দিয়ে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ও সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা করেন তিনি। সেই সঙ্গে পুনরায় প্রস্তাব করেন, “রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা—সবাই যেন ইসির নিজস্ব জনবল থেকে নিয়োগ করা হয়। এতে গুণগত পরিবর্তন আসবে।”
তিনি বলেন, “সমমনা দলগুলো বিগত দেড় দশক ধরে শুধু একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে—একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে কমিশনের দৃঢ়তা জরুরি। সংবিধানই আপনাদের ক্ষমতা দিয়েছে, নতজানু হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।”
ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের বিষয়েও সর্তক করেন বিএনপির এই নেতা। বলেন, “ধর্মকে যেন কোথাও রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করা না হয়।”
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি কর্মকর্তারা এবং অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।


