বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman) অভিযোগ করেছেন, একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কিছু ব্যক্তি ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে নানা ধরনের “টিকিট” ও “কনফার্মেশন” বিক্রি করছে, যা তার ভাষায় সরাসরি শিরকের পর্যায়ে পড়ে। তিনি বলেন, জান্নাত–জাহান্নামসহ পরকাল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত একমাত্র আল্লাহর হাতে—মানুষ এ বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে পারে না। তার মতে, “যেটার মালিক আল্লাহ, সেটির কমিটমেন্ট মানুষ দিলে তা আল্লাহর সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা—এটাই শিরক।”
ফার্মগেইটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনার কর্মসূচি’ শীর্ষক আলোচনার সমাপনীতে রবিবার (৭ ডিসেম্বর) তিনি এসব মন্তব্য করেন। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে জানাতে হবে—ধর্মীয় ভীতি ও প্রতিশ্রুতির নামে যাঁরা এসব প্রচার করছেন, তাঁরা শিরকে লিপ্ত হচ্ছেন। তাদের কথা অনুসরণ করলেও মানুষ শিরকের মধ্যে পড়ে যাবেন।
জামায়াতের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও তিনি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেন যে এই রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কিছু অংশ অতীতে যেমন বিতর্কিত ছিল, এখনো তেমনভাবেই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন—১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এ গোষ্ঠীর ভূমিকা দেশের মানুষ দেখেছে; কীভাবে তারা রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য লাখো মানুষকে হত্যা করেছে এবং সহযোদ্ধাদের মাধ্যমে নারীর মর্যাদা লুণ্ঠিত হয়েছে—এ ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না।
কঠিন সময়ের সতর্কতা
তারেক রহমান বলেন, সামনে দেশের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। ৫ আগস্টের পর থেকেই তিনি জনগণকে সতর্ক করে আসছেন। বিভিন্ন মহলে ষড়যন্ত্র চলছে, আর সেই ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে পারবে কেবল জনগণ—জনগণকে সঙ্গে নিয়েই পারবে বিএনপি (Bangladesh Nationalist Party)। তাঁর মতে, এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।
তিনি অভিযোগ করেন, কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি বা দল “পলাতক স্বৈরাচারের” পুরোনো সুরে বিএনপির বিরুদ্ধে আবারও প্রচারণা চালাচ্ছে। অথচ সেই সময়ে বিএনপি সরকারের ভেতরেই তাদের দলের দুজন শীর্ষ নেতা শেষ দিন পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন—যা প্রমাণ করে তারা খালেদা জিয়ার প্রতি আস্থাশীল ছিলেন এবং দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে তাঁর অবস্থানকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
বিচারব্যবস্থা ও দুর্নীতিবিরোধী বক্তব্য
তারেক রহমান বলেন, নিরপেক্ষ আদালত ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে—বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো ছড়ানো হয়েছিল, সেগুলো ছিল উদ্দেশ্যমূলক প্রোপাগান্ডা। তাঁর দাবি, একমাত্র বিএনপিই দেশকে দুর্নীতি থেকে টেনে তুলতে পেরেছিল, ভবিষ্যতেও সক্ষম হবে।
তিনি স্পষ্ট করেন—নতুন সরকার গঠনের সুযোগ পেলে প্রথম কাজ হবে দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা। কারণ এই দুই খাত নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যুব কর্মসংস্থান, কৃষি—কোনো খাতেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া (Khaleda Zia) ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন, অথচ পরবর্তী ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকার তা রাজনীতিকরণের মাধ্যমে কলঙ্কিত করেছে।
স্বাবলম্বী বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি
তারেক রহমান জানান, বিএনপি বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের অনুলিপি বানাতে চায় না। তারা চায় একটি স্বাবলম্বী বাংলাদেশ (Bangladesh), যেখানে মানুষ নিজেদের দেশে কাজ করবে, শান্তিতে বাঁচবে এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ছাত্রদলের প্রতি দিকনির্দেশনা
ছাত্রদলকে তিনি মাঠে নেমে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার আহ্বান জানান। বোনদের, কৃষকদের, তরুণ-যুবকদের কাছে বিএনপির পরিকল্পনা তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, অনেক বাধা আসবে, অনেক প্রতিপক্ষ সক্রিয় থাকবে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে কখনো দমিয়ে রাখা যায়নি। আগামীতে জনগণের রায় নিয়ে দেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হলে কাউকেই তা আটকে রাখতে দেওয়া হবে না।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনায় ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। আরও বক্তব্য রাখেন জিয়া উদ্দিন হায়দার, আবদুল মজিদ, আমিনুল হক, মীর শাহে আলম, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। পরে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন আলোচকরা।


