ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডকে ঘিরে দীর্ঘদিনের যে বিতর্ক চলে আসছে, তা নতুন করে সামনে এসেছে ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জামায়াতে ইসলামীর এক শীর্ষ নেতার অনলাইন বৈঠকের কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদ (Shafiqul Islam Masud)-এর সঙ্গে ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের ইনডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর মো. আব্দুল জলিল (Md. Abdul Jalil)। ভিডিওটিকে ঘিরে দানা বাঁধা বিতর্ক এখন আরও তীব্র হচ্ছে।
ফাঁস হওয়া ওই বৈঠকের অংশবিশেষে দেখা যায়, জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদ ভোটকেন্দ্রের ভেতর-বাইরের দায়িত্ব বণ্টন ও কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে কথা বলছেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে—এ ধরনের আলোচনা নির্বাচনের পরিবেশে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে?
নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী (Jasmin Tuli) মনে করেন, এই বৈঠকের কথোপকথন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে। তার মতে, নির্বাচনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্য রাখতে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য ও আচরণে আরও বেশি সতর্কতা থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, “যদি এ বক্তব্য সত্য হয়, তাহলে নির্বাচনকে ঘিরে বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি হতে পারে।”
অন্যদিকে, অভিযুক্ত জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদ অভিযোগ পুরোপুরি নাকচ করেছেন। তিনি দাবি করেন, সেদিনের অনলাইন বৈঠক ছিল একাধিক পেশাজীবী সংগঠনের নিয়মিত আলোচনা সভা—এতে কোনোভাবেই ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর পরিকল্পনা ছিল না, বরং আলোচনায় অংশ নেয় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষদের সংগঠনও।
ড. শফিকুল বলেন, “আমরা মাঝেমধ্যেই আলোচনায় বসি। কনভেনশনাল ব্যাংকসহ আমাদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো যুক্ত থাকে। বৈঠকে নির্বাচনী কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে দায়িত্ব পালন নিয়ে যে কথা বলা হয়েছে, সেটা ছিল কেবল দায়িত্বের ভারসাম্য বোঝানোর জন্য।” তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, কেউ যদি ভোট দিতে চান, তবে দায়িত্বে থাকলে তা সম্ভব নাও হতে পারে—এ বিষয়টি নিয়েই আলোচনা হয়েছিল। “এখানে কোনো নির্বাচন প্রকৌশল বা গোপন কৌশল নিয়ে কথা হয়নি,” দাবি তার।
অপরদিকে, এই অভিযোগ নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের ইনডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর মো. আব্দুল জলিলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিতর্কের মাঝেই নির্বাচন কমিশন (EC) নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে—আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আর কোনো বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাকে নির্বাচনী দায়িত্বে রাখা হবে না। এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই সাম্প্রতিক ভিডিও বিতর্কের সঙ্গে সম্পর্কিত বলেই মনে করছেন।
বার্তা বাজার/এমএমএইচ


