মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত যুব শোভাযাত্রায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির মহানগর আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে তিনি দাবি করেন, ২৫ মার্চের আগে মুজিব বাহিনী এলাকায় এলাকায় গ’\ণহ’\ত্যা চালিয়েছিল এবং এর প্রতিক্রিয়াতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ওই রাতে ‘ক্র্যাকডাউন’ পরিচালনা করে।
চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেট থেকে শুরু হয়ে বহদ্দারহাট মোড়ে গিয়ে শেষ হওয়া শোভাযাত্রার আগে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুব বিভাগ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি ও নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালী। শোভাযাত্রায় সংক্ষিপ্ত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
বক্তব্যে তিনি বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বহু মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জিত হয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ইসলামের আলোকে বৈষম্যহীন, ইনসাফপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা সে অঙ্গীকার রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলেই পরিস্থিতি মুক্তিযুদ্ধের দিকে গড়ায়।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়নি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর গড়িমসির কারণে শেষ পর্যন্ত ২৫ মার্চ আমাদের যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়। তবে তার ভাষায়, সেই রাতের ‘সঠিক ইতিহাস’ জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়নি। তিনি দাবি করেন, মূলত ২৫ মার্চের আগেই মুজিব বাহিনী এলাকায় এলাকায় গ’\ণহ’\ত্যা চালায় এবং সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়াতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ওই রাতে নামিয়ে ক্র্যাকডাউন চালায়।
এ পর্যায়ে তিনি আরও বলেন, ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে জেলখানায় ছিলেন এবং সেই ইতিহাসও নতুন করে উদ্ধার করা প্রয়োজন।
রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এগিয়ে এসেছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ৬ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনী এক সপ্তাহ যুদ্ধ করে বিজয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং ঢাকাসহ প্রধান সড়কগুলো দখলে নেয়। তার বক্তব্য অনুযায়ী, এরপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরিকল্পনায় ১৪ ডিসেম্বর দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নৃ’\শং’\সভাবে হ’\ত্যা করা হয়।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী বিজয়ের দিনে কোথায় ছিলেন এবং আত্মসমর্পণ দলিলে তাকে কেন স্বাক্ষর করতে দেওয়া হয়নি—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করাও ইতিহাস উদ্ধারের অংশ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর কমান্ডার ও গবেষক মাহফুজুর রহমান জামায়াত নেতার এই বক্তব্যকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি জানান, মুজিব বাহিনী গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের জুন-জুলাই মাসে, ফলে ওই সময়ের আগে তাদের পক্ষে কোনো ধরনের গ’\ণহ’\ত্যা চালানোর সুযোগই ছিল না। তার মতে, এ ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
শোভাযাত্রায় দেওয়া এই বক্তব্য ঘিরে দেশের মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও স্বাধীনতাপ্রেমী মহলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, মুক্তিযুদ্ধকালীন সঠিক তথ্য ও ইতিহাস সংরক্ষণ এবং বিকৃতির বিরুদ্ধে সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


