১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান জনগণকে উত্তেজিত করে চুরুটে পাইপ টানতে টানতে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ওই সময় ‘শ’\হীদ’ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব (National Press Club)–এর আব্দুস সালাম হলে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (Doctors Association of Bangladesh)–ড্যাবের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভূমিকা তুলে ধরতে গিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, শেখ মুজিব বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে উত্তেজিত করেছিলেন। এরপর চুরুটে পাইপ টানতে টানতে তিনি পাকিস্তানে চলে যান। তিনি নিজের পরিবারকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রেখে গিয়েছিলেন। আলালের ভাষায়, শেখ হাসিনার ছেলে জয়ের জন্ম হয়েছে সিএমএইচে, এবং শেখ মুজিবের পরিবারকে সে সময় ভাতা দেওয়া হতো। তিনি আরও দাবি করেন, পরবর্তী সময়েও শেখ হাসিনা জাতির কল্যাণে ভালো কিছু দেওয়ার উদ্দেশ্যে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেননি।
গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ও গ’\ণ’\হ’\ত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শেখ হাসিনা জিয়াউর রহমানের প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন আলাল। তার বক্তব্যে আসে, প্রায় ১২০০ কোটি টাকা ব্যয় করে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল, যদিও জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে ওই নামকরণ করা হয়।
তিনি বলেন, জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সংক্ষিপ্ত নাম হিসেবে ‘জিয়া’ (Zia International Airport) ব্যবহৃত হতো এবং সেই নাম পাসপোর্টের সিলেও থাকত। পরবর্তীতে জিঘাংসার বশবর্তী হয়ে এই নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। তার দাবি, হযরত শাহজালালের নামে বিমানবন্দর নামকরণে কোনো ভক্তি বা শ্রদ্ধা ছিল না; বরং ‘জিয়া’র পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত রূপ যেন ‘হাসিনা’ (Hazrat Shahjalal International Airport) হয়—এই হীন স্বার্থ থেকেই নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি নেতা বলেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তিনি এক দিনের জন্যও শান্তিতে থাকতে দেবেন না, এবং বাস্তবেও বেগম জিয়াকে শান্তিতে থাকতে দেওয়া হয়নি। অথচ জিয়াউর রহমানই আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করেছিলেন এবং জামায়াতে ইসলামীকেও পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। আলালের বক্তব্য, “আপনারা আজ যা মন চায় তা বলেন, আবার ক্ষমাও চান। আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে কোনো লাভ নেই।”
আগামী সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জয় লাভ করলেই যদি সারা দেশে জয় নিশ্চিত হতো, তাহলে মাহমুদুর রহমান মান্না, রুহুল কবির রিজভী কিংবা নুরুল হক নুরই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতেন। তিনি দাবি করেন, দেশের মানুষ এসব ক্ষমা করবে না।
বিএনপিকে শান্তিপ্রিয় ও গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসী মানুষের সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সবাই এখন সংস্কারের কথা বলছেন, অথচ সংস্কারের জন্মদাতা বিএনপি। তার মতে, জিয়াউর রহমানের খাল খনন কর্মসূচির মধ্য দিয়েই সংস্কারের সূচনা হয়েছিল এবং বিএনপির হাতেই বাংলাদেশের সব সংস্কার সাধিত হয়েছে। তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় ৩১ দফা বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় মুক্তির সনদ।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, তারেক রহমানের কন্যা জায়মা রহমান ভবিষ্যতে চতুর্থ প্রজন্মে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন।
সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার। ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবুল কেনান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডা. খালিকুজ্জামান দিপু, বিজয় দিবস–২০২৫ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. মোস্তাক রহিম স্বপনসহ অন্যান্য নেতারা।


