আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানালেন ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতা

আওয়ামী লীগের (Awami League) রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)-কে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ আইনপ্রণেতা। চিঠিতে তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের স্বার্থে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

চিঠিতে আইনপ্রণেতারা লিখেছেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। একইসঙ্গে তাঁরা জাতিসংঘের এক তদন্তের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় ১,৪০০ মানুষকে হ’\ত্যা করা হয়েছে। তবে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে ব্যক্তিক অপরাধ হিসেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক নীতির পরিপন্থী। “সংগঠনের স্বাধীনতা এবং ব্যক্তি অপরাধের জন্য ব্যক্তি দায়বদ্ধতা একটি মৌলিক মানবাধিকার। কোনো দলকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা এই নীতিগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”

এই পাঁচ মার্কিন আইনপ্রণেতা হলেন—গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস, বিল হুইজেঙ্গা, সিডনি কামলাগার-ডোভ, জুলি জনসন ও থমাস আর সুওজি। মার্কিন কংগ্রেসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই চিঠিতে তাঁরা আরও বলেন, “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কাজ করা, যাতে জনগণের কণ্ঠস্বর শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয় ব্যালটের মাধ্যমে।”

তাঁরা সতর্ক করে বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে এখনই প্রয়োজন সাহসী ও স্বচ্ছ সংস্কার। একই সঙ্গে আইনপ্রণেতারা মনে করেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আবার চালু করলে সেটিও রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবে দেখা যেতে পারে এবং তা গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

চিঠির এক পর্যায়ে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন অবাধ ছিল না—এই পর্যবেক্ষণ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও পর্যবেক্ষক দলও দিয়েছে। এমন বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের মতো বড় একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হলে ভবিষ্যতের নির্বাচন আরও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠতে পারে।

চিঠির শেষাংশে তারা আশাবাদ প্রকাশ করেন যে, বর্তমান সরকার অথবা ভবিষ্যতের কোনো নির্বাচিত সরকার এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করবে। “দিনশেষে, বাংলাদেশের জনগণ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের পছন্দের সরকার গঠনের অধিকার রাখে,”—লেখা হয়েছে চিঠিতে।

আইনপ্রণেতারা চিঠির অন্তিম বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশ আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আগামী দিনে আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণকে সমর্থন জানাতে প্রস্তুত আছি।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *