বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman)–এর নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘কভার্ট অ্যান্ড ওভার্ট’ নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রণয়ন করেছে। নিরাপত্তা পরিকল্পনাকে তিনটি জোন—রেড, ইয়েলো ও হোয়াইটে ভাগ করে সাজানো হয়েছে। এসব জোনভিত্তিক ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ, নজরদারি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ কার্ড ও আলাদা প্রটোকল নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ও সিএসএফ। পাশাপাশি মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (Dhaka Metropolitan Police) বা ডিএমপি এবং বিএনপি (Bangladesh Nationalist Party)–এর পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক সমন্বয় সভা হয়।
এসব সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিকল্পনাকে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। রেড জোনে প্রবেশের জন্য বিশেষ সিকিউরিটি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। এই কার্ড ছাড়া কোনোভাবেই সেখানে প্রবেশ করা যাবে না। ইয়েলো জোনের জন্য থাকছে আলাদা কার্ড, যা প্রাপ্ত ব্যক্তিরাই কেবল ওই এলাকায় যেতে পারবেন। রেড ও ইয়েলো জোনের বাইরের এলাকা হোয়াইট জোন হিসেবে বিবেচিত হবে, যেখানে সাধারণ মানুষের চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারেক রহমানের আগমনের দিন পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার প্রায় দুই হাজার সদস্য মোতায়েন থাকতে পারেন। তবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও তাকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এসএন নজরুল ইসলাম মঙ্গলবার বলেন, তারেক রহমানের নিরাপত্তায় ‘কভার্ট অ্যান্ড ওভার্ট’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় পেশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট করেন, তারেক রহমানকে এসএসএফ দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, নিরাপত্তা পরিকল্পনায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (Hazrat Shahjalal International Airport) থেকে শুরু করে এভারকেয়ার হাসপাতাল হয়ে গুলশান পর্যন্ত যাতায়াতের রুট এবং তার বাসভবনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হলেও এখনো চূড়ান্ত নির্দেশনা জারি হয়নি।
‘কভার্ট অ্যান্ড ওভার্ট’ নিরাপত্তাব্যবস্থার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, এটি প্রকাশ্য ও গোপন—দুই ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কৌশল। প্রকাশ্যে পোশাকধারী পুলিশ দায়িত্ব পালন করবেন, আর গোপনে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকবে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গুলশানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)–এর বাসভবনের পাশেই তারেক রহমানের বাসভবন হওয়ায় দুটি বাসা এবং তারেক রহমানের অফিসকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনার আওতায় আনা হয়েছে। বাসা ও অফিসের মধ্যকার দূরত্ব এবং চলাচলের পথকে অতিগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই সেখানে পুলিশের বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে।
এ ছাড়া ২৫ ডিসেম্বর রুটজুড়ে প্রতিটি থানা এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। বিশেষ এসকর্টের পাশাপাশি একাধিক চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে। বর্তমানে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় সাধারণত নয়টি চেকপোস্ট চালু থাকে, যেখানে সার্বক্ষণিক ১৫০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং তার বাসভবনের আশপাশে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রওনক আলম জানান, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট সমন্বিতভাবে নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তিনি বলেন, চূড়ান্ত নির্দেশনা পেলেই নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হবে।


