যশোরে বিএনপির তিন আসনে প্রার্থী পরিবর্তনে দলে চলছে নানা হিসাব নিকাশ

যশোর জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটিতে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া প্রার্থী বদলে ফেলেছে বিএনপি (BNP)। এর মধ্যে একটি আসন জোটের শরিক দলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে স্থানীয় নেতা–কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, আবার কেউ এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ‘ত্যাগীদের মূল্যায়ন’ হিসেবে দেখছেন।

গত বুধবার দুপুরে যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়ে পরে তাকে বাদ দেওয়া হয়। পরিবর্তে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয় বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (একাংশ) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মুফতি রশীদ বিন ওয়াক্কাস–কে। তাঁর বাবা মুফতি ওয়াক্কাসও এক সময় এই আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন।

এই প্রার্থী পরিবর্তনে মনিরামপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। জেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই আসনে ৮৪ হাজার সংখ্যালঘু ভোট আছে, যা শহীদ মো. ইকবাল হোসেন সহজেই টানতে পারতেন। জমিয়তের প্রার্থীর পক্ষে এটা কঠিন হতে পারে।”

ইকবাল হোসেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে প্রার্থিতা পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন বলে জানান। জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, “দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করব। তবে যশোর–৫–এ প্রার্থী পরিবর্তনে তৃণমূলে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।”

যশোর–১ (শার্শা) আসনে প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও পরে তা পরিবর্তন করে দেওয়া হয় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটনের হাতে। এতে তৃপ্তির সমর্থকরা হতাশ হলেও লিটনপন্থীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। শার্শায় জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন মাওলানা আজীজুর রহমান, যিনি ২০০৮ সালে জোট প্রার্থী হয়ে স্বল্প ব্যবধানে হেরেছিলেন।

যশোর–৬ (কেশবপুর) আসনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে বাদ দিয়ে কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে শ্রাবণের পরিবারের ঘনিষ্ঠতা থাকায় স্থানীয় এক নেতা মনে করেন, শ্রাবণ এ আসনে সহজেই আওয়ামী লীগের ভোট টানতে পারতেন। তবে আজাদপন্থীদের দাবি, ত্যাগী ও নিবেদিত নেতাকে মূল্যায়ন করেছে কেন্দ্র।

এদিকে শ্রাবণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাসে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন।

অন্যদিকে যশোরের বাকি তিনটি আসনে প্রার্থী অপরিবর্তিত রয়েছে। যশোর–৩ (সদর) আসনে খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর–২ (ঝিকরগাছা–চৌগাছা) আসনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবিরা নাজমুল মুন্নি, এবং যশোর–৪ (বাঘারপাড়া–অভয়নগর) আসনে টি এস আইয়ুব ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

যশোরের এই তিনটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন ভোটের মাঠে বি’\এন’\পি’কে নতুন বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *